জন্মদিনে মামার চিঠি

১৪/১১/২০১৯

খুলনা

 

আদরের নায়রা,

আমার সালাম নিও। বাবামার কাছে সযত্নেই আছো নিশ্চয়ই। এই তো সেদিনের কথা, আমার স্পষ্ট মনে আছে, আজকে থেকে ঠিক একবছর আগে তুমি ঘর আলো করে এসেছিলে। জানো তো, তখন পারিবারিক বেশকিছু ছোট খাটো ঝুট ঝামেলা ছিলো, তুমি এসে সবকিছুকেই উড়িয়ে দিলে।

তুমি যেদিন এসেছিলে, সেদিন বড় মামা তোমার পাশে ছিলো না। কি যেন এক কাজে যেতে হয়েছিলো ঢাকায়। কিন্তু সেদিন ঠিকই তোমার পৃথিবীতে আসার খবর পেয়ে মামার চোখে আনন্দের অশ্রু ঝরেছিলো। এরই মধ্যে তোমার প্রায় সাড়ে তিন কোটিবার হৃদস্পন্দন হয়ে গেছে। প্রথম জন্মদিন পালন করছো বাবামা-ছোটমামা-নানানানি আর নিকটয়াত্নীয়দের সাথে। আজও আমি নেই তোমার পাশে। এবার আমি খুলনায়। ইয়ার ফাইনাল। তাই রাত জেগে বই নিয়ে বসে থাকতে হচ্ছে। যাহোক, ভাবছিলাম তোমাকে জন্মদিনে কি উপহার দিবো। এটাওটা ভাবার পর মনে হলো কাগজ কলম নিয়ে তোমার উদ্দেশ্যে মনের কথাগুলো লিখে ফেলি। এই চিঠি নিশ্চয়ই তোমার মা (আমার বড় বোন) অত্যন্ত সযত্নে রেখে দিবেন। তুমি যখন পড়তে শিখবে, তখন আমার হাতে লিখা এই চিঠি তুমি পড়বে। তখন তোমার কি অনুভূতি হবে সেটা চিন্তা করেই আমি লিখতে বসলাম। আমি যখন পৃথিবী থেকে চলে যাবো, তখনও হয়তো এই চিঠিটাই আমার স্মৃতি হয়ে তোমার সাথে থাকবে।

আমি কোন প্রত্যাশার ভার তোমার উপর চাপাতে চাইনা। খুব বেশী বয়স হয়নি আমার। মাত্র ২২। এক চিঠিতে এতোদিনের শিক্ষা একসাথে দেয়া সম্ভব নয়। সম্ভবত উচিতও নয়। শুধু কিছু বাস্তবতা তোমার কাছে তুলে ধরতে চাই। জানি, তোমার সময়ে আমার এইকথা অচল মনে হবে। তবুও চেষ্টা করবো কিছু বিষয় লিখতে যেগুলো সবসময়ের জন্য।

(এক) কিছু কাজ সবসময় করবে – প্রশ্ন করবে, বই পড়বে, সত্য বলবে, নামাজ-কালাম পড়বে এবং বাবামা’র কথা শুনবে।

(দুই) মনে কখনো এতোটুকু অহংবোধ রাখবেনা। যাকে হয়তো নাক শিটকায়, তোমার পরিনতি তো তার মতো বা তার চেয়েও খারাপ হতে পারতো। নিজেকে তাদের অবস্থানে নিয়ে একটু চিন্তা করবে।

(তিন) অনেক বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখবে, তবে লোভ করো না। লোভ মানুষকে অস্থির করে তোলে। টাকা নয়, বরং শান্তিকেই আগে বিবেচনা করবে।

(চার) নিজেকে কখনো, কখনো এবং কখনোই অন্যের সাথে তুলনা বা প্রতিযোগিতা করবেনা। প্রতিযোগিতা হবে শুধুমাত্র নিজের সাথে। নিজেকে ছাড়িয়ে যাও, এভাবে একসময় পৃথিবীকেই তুমি ছাড়িয়ে যেতে পারবে।

(পাঁচ) কখনো রাগ নয়, বরং যুক্তি দিয়ে জিতবে! হাসিমুখে থাকবে। অন্যকে গুরুত্ব দিবে। কান দুটো, চোখও দুটো, কিন্তু মুখ একটাই। তাই বেশী বেশী দেখবে ও শুনবে, কিন্তু কথা বলবে পরিমিত।

(ছয়) নিজেকে বিশ্বাস করবে, আর নিজের কাছে সৎ থাকবে। দুনিয়ার কেউ তোমাকে পরাজিত করতে পারবেনা। একই ভূল তুমি দ্বিতীয়বার করবেনা।
(সাত) কখনো নিজের উপর নিয়ন্ত্রন হারাবেনা, হাল ছেড়ে দেবেনা।

(আট) পৃথিবীতে সবকিছুই ক্ষণস্থায়ী, শুধুমাত্র পরিবর্তনটা ছাড়া। তাই সবসময় সবকিছুর জন্য প্রস্তুত থাকবে।

 

 

 

ইতি,

তোমার আদরের বড় মামা                                                                                                                    ইউসুফ মুন্না

 

মেলফাংশান ইন সোসাইটি

ক্ষমতা ও জনসাধারণ

করিম সাহেবের বিগত অনেক প্রজন্মধরে ধনদৌলত আছে। ধনদৌলত বলতে শুধু ধনদৌলতই, আর কিছু নেই। অবশ্য শুধু তাই যথেষ্ট। আর সে ধনদৌলতকে কেন্দ্র করে সমাজে তার একটা ভালো অবস্থানও তৈরি হয়েছে। যাহোক, সে ধনদৌলত রক্ষার জন্য তার গোষ্ঠিতে কিছু লাঠিয়াল বাহিনী আছে যারা মূলত ভদ্রবেশী ডাকাত। রতনে রতন চেনে। এই লাঠিয়াল বাহিনীর সদস্যরা অবশ্য সমাজের প্রতিষ্ঠিত ডাকাতদের সাথে যোগসাজশে বিভিন্ন কাজে জড়িত থাকে। যেহেতু এই লাঠিয়াল বাহিনী সমাজের ধনদৌলতওয়ালাদেরই তৈরি করা লোক এবং তাদের আশ্রয়পস্রয়ে বেড়ে উঠা, সেহেতু তারা সমাজে ছোটবড় কিছু অন্যায় করলেও পার পেয়ে যান। কারন সমাজে বিচার করছেন তো ওই ধনদৌলতওয়ালারাই। এই সুযোগে ধনদৌলতওয়ালারাও লাঠিয়ালবাহিনী এবং তাদের সাথে সংযুক্ত ডাকাতদের নানান কাজে, নানান ভাবে, নানান সময়ে ব্যবহার করতে পারেন। এভাবে লাঠিয়ালবাহিনী (এবং তাদের সাথে সংযুক্ত সমাজের প্রতিষ্ঠিত ডাকাত) ও ধনদৌলতওয়ালা লোকেদের মধ্যে একটা সিনার্জি তৈরি হয় এবং একে অপরের কাজ, প্রভাব ও সম্পদ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে থাকে।

রাজনীতি ও নির্বাচন

নির্বাচন মানে ধনদৌলতওয়ালাদের ক্ষমতাকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করার পালা। ধনদৌলতওয়ালাদের টাকাও আছে, আবার প্রভাবও আছে। ধনদৌলতওয়ালাশ্রেণির নেতারা বৈঠক করে এমন একজনকে নির্বাচনে দাড় করান যাকে ভালো মতো কাজে লাগানো যাবে। তার জয় নিশ্চিত করার জন্য তারা সম্ভাব্য সবটুকুই করেন। টাকা, হুমুকি-ধামকি দিয়া ভোট কেনা, অন্য প্রার্থীদের প্রচারণার ব্যঘাত ঘটানো, প্রভাব খাটিয়ে কেন্দ্র দখল, এমনকি ঘুষ দিয়ে ফলাফল নিজেদের পক্ষ্যে করে নেয়ার মতো ব্যাপার এভাবে ঘটে থাকে। জয় আর ঠেকায় কে?

অরাজকতা ও বিশৃঙ্খলা

ধনদৌলতওয়ালারা ক্ষমতায় তারা চলে এলো। বলে রাখি, তারা টাকা খরচ করে ক্ষমতায় এসেছে মানুষের সেবার জন্য নয়, বরং কাজ, ক্ষমতা, সম্পদ আর প্রভাবের বিস্তৃতির জন্য। নির্বাচনের প্রচুর টাকা খরচ হয়েছে। তাই প্রথম কাজ হয় সে টাকা তুলে আনা। মেম্বার চেয়ারম্যানদের বেতন তো সর্বোচ্চ হাজার বিশেক, তা দিয়ে কি আর পাছ বছরে বিশ তিরিশ লাখ টাকা লাভ সহ তুলে আনা যায়? সেজন্য তারা ভিজিএফ, ভিজিডি এর কার্ড বিক্রি করে (এটাও আলাদাভাবে বিশাল এক কাহিনী), এলাকার বিচারের সময় ঘুষ খায়, আগে যারা ধনদৌলতওয়ালাদের বিপক্ষ্যে কথা বলেছিলো বা কাজ করেছিলও তাদের ফাসায় ইত্যাদি। এভাবেই অরাজকতা আর বিশৃঙ্খলার শুরু। তাদের দেখে অন্য গোষ্ঠিরাও প্রভাবিত হয় এবং ধনদৌলতওয়ালাদের পথ অনুসরন করে তারাও ক্ষমতায় আসার চেষ্টা করে। যা অরাজকতা আর বিশৃঙ্খলাকে প্রসারিত করে।

মন ভালো নেই?

সে সকাল থেকেই মন ভালো নেই, মন ভালো নেই বলে বেড়াচ্ছি। ওয়েট… ঠিক সকাল নয়, কাল রাত থেকেই। আমার হঠাত হঠাত এমন হয়। মন খারাপ হলে একেকটা সময় একেকরকম করি। চট্টগ্রামে থাকতে আমি সবচেয়ে কমনলি যেটা করতাম সেটা হলো চুল কাটতে যেতাম। তালিকায় তারপর আছে ডিসি হিলের উপর দিয়ে চেরাগি মোড় হয়ে বাতিঘরে যাওয়া। তাছাড়াও আরেকটা জিনিস আমি করতাম – অচেনা পথ ধরে যেতে থাকতাম। একটা প্যাটার্ন তখন ডিজাইন হয়ে গিয়েছিলো।

অচেনা পথ ধরে হাটা, অচেনা জায়গায় যাওয়া, অনেক উপর থেকে নীচের কিছুকে দেখা, মাক্রোস্কোপের ভেতরে তাকানো – এসব জিনিসগুলো সবাইকে সবসময় টানে। সবটুকু মনোযোগ দিয়ে আমি কাজগুলো আমি করি। তাই মন খারাপ থাকলেও সেদিকে আর মনোযোগ থাকেনা।

যাহোক, খুলনায় এসে এই প্রথম সেরকম মনে হচ্ছে। আগেই মন খারাপ হলে কিসব করি তা বলেছি। এবার একটু ভিন্নভাবে এবং গভীর থেকে বিষয়টাকে বোঝার চেষ্টা করেছি। (এক) এতোদিন কিছু কাজ যেভাবে চেয়েছিলাম ঠিক সেভাবে হচ্ছিলো না। এখন সব কাজ একসাথে কাজ করা শুরু করেছে তাই প্রেসারে পড়ে গেছি। তাই মনে খারাপ হয়ে গেলো। (দুই) কয়েকদিন ধরে ঘুম ভালো হচ্ছেনা। (তিন) টার্ম ফাইনালের কথা নাহয় বাদই দিলাম।

প্রথমে অল্প মন খারাপ হয়। তারপর মন খারাপ কেন হলো সে কথা ভেবে আরও মন খারাপ হয়। এবং সর্বশেষ, এতো মন খারাপ কেন হলো সেটার চিন্তায় মন একদমই খারাপ হয়ে যায়। এই হলো অবস্থা।

দৃষ্টিভঙ্গি সবসময়ই একটা পাওয়ারফুল ব্যাপার। আমি খুব সূক্ষভাবে বিশ্লেশন করে দেখলাম আমাদের চারপাশে এমন অনেক ছোট ছোট কারন আছে যার সংখ্যা আমাদের মন খারাপ হওয়ার কারনের চেয়ে বেশী।

আমি দেখলাম এই মুহূর্তেই আমি বেশ কিছু সেলিব্রেট করার মতো ছোট ছোট কারন বলে দিতে পারি। আমি মসজিতে বসে বসে যখন চিন্তা করছিলাম, তখন আমার পাশেই বন্ধু নাফিস বসে ছিলো। নাফিসকে বললাম আজ আমার মন খারাপ, বিকালে ফুটবল খেলবো। সে সাথে সাথেই রাজি হয়ে গেলো। সে যদি কোন কারনে না করতো? সে নিশ্চয়ই আমার মন ভালো করতে চায়। আবার, সব কাজ একসাথে হচ্ছে, সেটাকে প্রেসার হিসেবে নিচ্ছি কেন? একটু প্রেসার হলেও সেটা তো আমার ভালোর জন্যই। তাছাড়াও বুঝতে পারলাম আসলে আমার বাইরে প্রচন্ড গরম পড়ার কারনে একটু মন খারাপ হয়েছে যেটা নিয়ে আর যা-ই হোক, মন খারাপ করা যায় না। কারন সেটা আমার নিয়ন্ত্রনে নেই।

তাই আমি মনে করি মন খারাপ না করে বরং এভাবে বিষয়গুলোকে চিন্তা করা যাতে পারেঃ

  • মন খারাপের কারনগুলোর মূলে যাওয়ার চেষ্টা করুন।
  • আশেপাশে ভালোভাবে খেয়াল করলে দেখলে সেলিব্রেট করার দুয়েকটা কারন পেয়ে যাবেন। বাদ যাবে কোন সেলিব্রেশন – এমনভাবে চলতে পারেন।
  • করতে ভালো লাগে কিংবা মনোযোগ সরিয়ে রাখে সেরকম কোন কাজ করতে পারেন।

এতোটুকুই। ভালো থাকবেন। ভালো রাখবেন।

জীবন থেকে নাই হয়ে যাওয়া একটি দিন

পহেলা মার্চ, ২০১৯। শুক্রবার রাত ১১টা। হানিফ পরিবহনের বাসে চেপে রওনা দিলাম ঢাকার উদ্দেশ্যে। যাচ্ছি ‘BRAC Frugal Innovation Forum – 2019’ এ। বাসা থেকে নাফিস, অপু আর রুবেল গিয়েছিলো আমাকে বাসে তুলে দিতে। অটো থেকে নেমে একসাথে চা-কলা খেয়েছি, তারপর বাসে উঠেছিলাম। কাউন্টারে ‘বাম পাশে, মাঝখানের কোনো সিট’ খালি আছে কিনা জানতে চেয়েছিলাম। না পেয়ে অগত্যা ডান পাশের ‘জিথ্রি’ তেই বসতে হলো।

বাস চলছে…চলছে…। পাশের সিটে কেউ নেই। তাই ব্যাগটা খালি সিটেই রাখলাম। যশোরের মনিহার সিনেমা হলের পাশে হানিফের কাউন্টার। রাতে ভাতটাত খাওয়া হয়নি। কোথাও যাওয়ার আগে কিছু খেতে আমার ভালো লাগে না। অবশ্য সে রাতে মেসে বুয়াও আসেননি। ১৫ মিনিটের বিরতিতে একটা চা, একটা কলা খেয়ে নিলাম। একটা পানিও কিনে নিলাম।

বাস আবার চলা শুরু করলো। এখনো পাশের সিট ফাঁকা। বাস পউছালো দৌলতদিয়ার ঘাটে। এবার ফেরির অপেক্ষা। প্রথমে একঘাটে গিয়ে ফেরি না পেয়ে অন্য ঘাটের দিকে চলছে গাড়ি। পথিমধ্যে দুই ভদ্রলোক বাসে উঠলেন। একজন লোক বসতে চাইলেন এবং বসলেন আমার পাশের সিটে। অন্যজন আমার ঠিক পেছনেরটায়। মাঝে অনেক আগে কন্ডাক্টর এসে একবার জিজ্ঞেস করে গিয়েছিলেন কোথায় নামবো। আমি বলেছি গাবতলী। সেটা অবশ্য বাসে উঠার একটু পর পরই। যাহোক…

বাস ফেরিতে উঠলো। ফেরি চলছে। আমি ব্যাগ বাসে রেখেই বাস থেকে ফেরিতে নামলাম। টয়লেটগুলোতে দেখি লাইন পড়েছে। আমি আশাহত হয়ে পাশের ছোট দোকানটায় বসে আছি। দশটাকার ঝালমুড়ি আর একটা লাল চা খেতে খেতে টয়লেটের লাইনও শেষ। শৌচকার্য সেরে আবার বাসে উঠে পড়লাম। পাশের ভদ্রলোক দেখতে খুব হাসিখুশি চেহারার। একদম আমার মতো স্মাইলি ফেস। কাপড়চোপড়ে এতোটাই ভদ্র যে শুধু টাই পড়াটাই বাকি।

ফেরি পার হয়ে বাস কিছু দূর গেলো। পাশে বসা ভদ্রলোক আমাকে অর্ধেক প্যাকেটের একটা এনার্জি বিস্কুটের প্যাকেট থেকে বিস্কুট অফার করলেন। আমি বললাম ধন্যবাদ ভাই, খাবো না। উনি বললেন, না ভাই খান। সমস্যা নাই। আমি একটা বিস্কুট খেলাম। পরে ভদ্রতার সহিত জোর করে আরেকটা বিস্কুট খাওয়ালেন। ওই প্যাকেট থেকে উনিও বিস্কুট খাচ্ছিলেন। তাই সাতপাঁচ না ভেবেই খেয়েছি। আমি তখন আমার বন্ধুর সাথে মেসেঞ্জারে চ্যাট করছিলাম। জিজ্ঞেস করলো ‘কতোদূর গেলি?’ আমি বললাম পদ্মা পার হলাম মাত্র। একটু পর এবার অফার করলেন ফান্টা। সেটাও তিনি যথারীতি ভদ্রতার সহিত জোর করে খাওয়ালেন। আমি প্রথমে এক ঢোক গিলেছিলাম। পরে আরেক ঢোক। এই আরকি। ওই লোকের সাথে তেমন একটা কথা হয়নি গোটা জার্নিতে।

রাত মোটামুটি সাড়ে তিনটা। চোখে ঘুম আচ করা শুরু করেছি। রাত যেহেতু সাড়ে তিনটা, ঘুম আসারই কথা। কখন যে ঘুমিয়ে পড়লাম খেয়ালই করিনি।

মাঝে একদিন জীবন থেকে নাই হয়ে গেলো। শুক্রবার রাত (আসলে রাত ১২টার পর তো শনিবারই হয়ে গিয়েছিলো।) গোটা শনিবার অজ্ঞান থাকার পর, রবিবার সকাল নাগাদ চোখ খুলে নিজেকে সম্পূর্ণ অপ্রস্তুতভাবে আবিষ্কার করলাম ঢাকা মেডিকেলের ব্যাডে। ক্যাথেটার আর ডান হাতে ক্যানুলা লাগানো। চোখ খুলতেই প্রথম দেখলাম বাবাকে। কিরে? কি হলো? আমি কোথায়? এ জায়গাটায় বাংলা সিনেমার কাহিনী মনে হলেও, বিশ্বাস করুন, তাই ঘটেছিলো আমার সাথে। আগের গোটা দিনে কিভাবে কখন কি ঘটেছিলো সেটা সম্পর্কে কিছুই মনে করতে পারছিলামনা আমি। হঠাত এমন অবস্থায় নিজেকে আবিষ্কার করে খুবই অস্বঃস্থি বোধ করছিলাম। আবার বোধহয় জ্ঞান হারিয়েছি বা ঘুমিয়েছি বেশ কয়েক ঘন্টার জন্যে। এবার জেগে দেখি ক্যাথেটারও নেই, ক্যানুলাও নেই। বাবা পাশে বসে আছেন আর কপালে হাত বুলাচ্ছেন।

পকেটে থাকা হাজার পাঁচেক টাকা, ব্যাগে থাকা দুই দিনের কাপড়চোপড়, ল্যাপটপ, দুটো বই (এর মধ্যে একটা হলো নিয়াজ আহমেদ এর ‘ডোনাল্ড ট্রাম্প’ যেটার জন্য অনেক দিন অপেক্ষায় ছিলাম। বেশ কিছুদূর পড়েছি। ভেবেছিলাম যাত্রা পথ আর গন্তব্য মিলিয়ে শেষ করে ফেলবো। সেটা আর হলো কিভাবে!), মোবাইল এর সাথে দুটো পেনড্রাইভ, ব্যাবহৃত ব্রাশ, চার্জার, হেডফোন এবং ব্যাবহৃত জাঙ্গিয়াও খোয়ালাম। তাও ভালো, জীবনটাতো খোয়ায়ইনি। তবে মৃত্যুকে খুব কাছ থেকেই অনুভব করেছি।

এবার আসা যাক নাই হয়ে যাওয়া দিনটাতে। প্রথমেই বলে রাখি এর সবটুকুই শোনা। সেই ঘুমের ঘোরেই তো অজ্ঞান হয়ে গেলাম। এইদিকে ভদ্রলোক শালা তার পার্টনার সহ সব লুট করে নিয়ে কোথায় নেমে গেলো কে জানে! বাস গাবতলী ছাড়িয়ে কল্যাণপুর চলে এলো। লাস্ট স্টপেজ। কন্ডাক্টর আমাকে কিঞ্চিৎ চেতন অবস্থায় কাউন্টারে নামালেন। আমাকে ফোন নাম্বার জিজ্ঞেস করার পর আমি নাকি আমার বোনের নাম্বার দিয়েছি (যদিও তার কিছুই আসলেই আমি মনে করতে পারছি না)। আপু হতে দুলাভাইয়ের মাধ্যমে উনার এক ছোটভাই আমাকে কাউন্টার থেকে আমাকে নিয়ে যায় পাশের এক ক্লিনিকে। সেখানে আমার প্রাথমিক চিকিৎসা হয়। তারপর ঢাকা মেডিকেলে। ততক্ষণে আব্বু উড়ে এসেছেন কক্সবাজার থেকে। ঢাকায় থাকা আমার অনেক বন্ধু, বিশেষ করে সুদীপ্ত, হাবিব, সাদমান, ইয়ার মোহাম্মদ, ঢামেকে পড়ুয়া বন্ধু হাসনাত, আমার তালতো ভাই তথা ফিউচার স্টার্টআপের রুহুল কাদের ভাই সহ অনেক আত্নীয় এসেছেন দেখতে। সবার প্রতি আমার অশেষ কৃতজ্ঞতা, ভালোবাসা।

যাহোক, অসুস্থতার কারনে একদিন মিস গেলেও কোনভাবে ম্যানেজ করে দ্বিতীয় দিন জয়েন করলাম ব্রাক সিডিএমে তে ‘ফ্রুগাল ইনোভেশন ফোরামে’। সেখানে আমার রুমমেট হলো লাবিব। লাবিব তাজওয়ার রহমান। স্ট্যানফোর্ডে পড়ছেন। বন্ধুবর লাবিব আমেরিকা থেকে বার্সেলোনা হয়ে বাংলাদেশে আসার পথে সেও লাগেজটা হারিয়ে এসেছে বার্সেলোনা এয়ারপোর্টে। এই হলো সম্পূর্ণ ঘটনা।

ওষুধ খাচ্ছি। ঠিক হয়ে যাবো ইনশাআল্লাহ। তবে যতদিন এই পৃথিবীতে যতদিন বেঁচে থাকবো, তার চেয়ে একদিনের কম স্মৃতি থাকবে আমার।

 

This is how I come up with the idea of Reflective Teens​ 

Reflective Teens is a group of young adults working for flourishing the creativity of teenagers and helping them prepare for the present and the future through proper utilization of their creative abilities. However, the long 8 years of RT had begun due to the love of writing one teenager had and his experiences related to his passion. Yusuf Munna had discovered his talent and enthusiasm for writing at a very young age, inspired by his father. He continued reading and writing for years working to develop his skills. He even went further to submit his writings in various media platforms like newspapers and magazines to be published. Despite being persistent and hopeful, all his efforts to publish his writing were being sent to vain. Being daunted and almost at the verge of losing his confidence, one of Yusuf’s seniors introduced him to a writer in a newspaper who expressed his interest in Yusuf’s writings. With no ray of hope, Yusuf sent an old writing from his enormous pile of work which he had previously submitted to innumerable institutions. To his surprise, this time his writing was immediately published; even though he had submitted similar writings to the same institution before. Yusuf Munna realized the power of connection for the first time. He spoke to a few of his writer friends from school only to realize that almost everyone had faced similar situations. This group of young teenagers came to acknowledge the fact that in mainstream media the path to success for new creative individuals is full of toilsome hurdles. In an effort to create more opportunities, at least for their fellows, these teenagers settled to form a web magazine. Albeit the technological boom in early 2010s, because of which Yusuf and his friends wanted to form a web magazine rather than a physical one, the technological advancement had not reached everyone at the same rate as today. Yusuf neither had the knowledge of forming a website nor any access to the internet; only the passion to do something right. With money he had saved from his allowance, Yusuf learned WordPress through YouTube in a nearby cybercafé and bought a domain to finally structure the web magazine in 2013. With the simple yet unyielding motto ‘of the Teens, by the Teens and for the Teens’ – adopted from Abraham Lincoln’s speech – the web magazine grew both quantitively and qualitatively. Besides writing, the magazine published other creative works like paintings, photographs etc. The magazine, which popularized in their school, began receiving submissions from peers in other schools; even a few from outside the country. However, the hard truth hit them one day that the web magazine was also based on connections and did not eliminate the root cause of the issue which was their initial aim. They moved out of the sole concentration on the web magazine and designed the very first program named RT Talks – a talk sessions. RT then received some media coverage that brought attention to them in terms of participants, supporters and volunteers. Through slow progress of the years, many new programs were included into the main structure of RT and many were excluded. After 8 years of hard-work, Reflective Teens is a proud team of a few short of 50 young adults with 3 successful main programs running throughout the year, a web magazine, a strong and supportive Board with prestigious figures and thousands of followers. Reflective Teens has been mentioned in a number of media platforms and has also reached many countries worldwide. They believe this is just the beginning of a flourishing journey in store for RT. Even through their success, they stay clear with their initial goal and constantly work to restructure programs in alignment with their core values. The programs of RT focus strictly on effectiveness, efficiency and sustainability among others. Such invaluable works are generated from a team of young individuals who are coherently working together while empathizing with each other and being open to new ideas or arguments. In their workspace, they are deep into being value driven and believe in decentralization of power, hence the lack of strict hierarchy in the team. Reflective Teens has big ambitions but are rooted to the ground with their motto and beliefs. Reflective Teens is a group formed by the realization of struggles of teenagers which is undauntingly working to form a thriving, equitable and inclusive world.

I Have Promises to Keep

২০১৮, আমার জীবনের পাতায় অমৃত হয়ে থাকবে। এই বছর আমাকে অনেক নতুন, কঠিন অথচ বাস্তব… অনেক অমূল্য শিক্ষা দিয়েছে। অনেক নতুন পথে হেঁটেছি। পথ চলতে চলতে অনেক কিছুকে নতুনভাবেই দেখেছি; পৃথিবী যে এতো বিচিত্র তা ২০১৮ আমাকে আরও গভীর থেকে অনুভব করতে সাহায্য করেছে। কখনো সারারাত কেঁদেছি। আবার কখনো খুশিতে একলাফে আকাশ ছুয়েছি। একটু একটু করে পুড়ছি আর মানুষ হওয়ার পথে চলেছি।

২০১৮ সালে যেসব ব্যাক্তি আমার জীবনে সবচেয়ে বেশি ভেল্যু এড করেছে তার মধ্যে পারসন ‘অফ দ্য ইয়ার’ হলো সাফাত আল ফাহিম। আমাদের উদ্যোগ – রিফলেক্টিভ টিনস (যাকে ধীরে ধীরে প্রফেশনালি নেয়ার চেষ্টা করছি, প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরের চেষ্টা করছি) – ব্যাক্তিগত জীবনের সাথে উতোপ্রতভাবে জড়িত। উপরের বর্ণনা থেকে নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন যে ২০১৮ আমার জন্য খুব চ্যালেঞ্জিং ছিলো। ব্যক্তিগত অস্থিরতা, তার মধ্যে এমন একজনকে সাথে পাওয়া ছিলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ফাহিম এমন একজন মানুষ যে আমাকে ভালো বুঝে, একই মাপের এবং একইভাবে চিন্তা করে, সবশেষ যাকে নির্ভর করা যায়।

এতোকিছুর মধ্যে দিয়ে সবকিছুকে মোটামুটি গুছিয়ে আনতে পেরেছি বলে মনে হয় – এর সবই মহান আল্লাহর কৃপায় আর ফাহিম, নাশিবা, দিয়া আর হাবিবকে সাথে পাওয়ায় সম্ভব হয়েছে। অশেষ ভালোবাসা তোমাদের।

২০১৯ – এখন আল্লাহর রহমতে ব্যক্তিগত জীবন অনেকটাই স্থির। ভালোখারাপ সব মুহূর্ত এক করলে নিজেকে খুব ধনী ধনী মনে হয়। যাহোক, সেসব অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে চাই। ২০১৯ আমার জন্য ‘ইয়ার অফ সাসটেনইবিলিটি’ আর্কিমিডিস বলেছিলেন – “give me space to stand i will move the earth” – ছোট্ট একটা জায়গা হয়তো ম্যানেজ করে ফেলেছি। এখন কিছুটা নাড়িয়ে দেয়া যায় কিনা সে চেষ্টায় আছি। মাফ চাই, দোয়াও চাই।