জন্মদিনে মামার চিঠি

Yusuf's DiaryLeave a Comment on জন্মদিনে মামার চিঠি

জন্মদিনে মামার চিঠি

১৪/১১/২০১৯

খুলনা

 

আদরের নায়রা,

আমার সালাম নিও। বাবামার কাছে সযত্নেই আছো নিশ্চয়ই। এই তো সেদিনের কথা, আমার স্পষ্ট মনে আছে, আজকে থেকে ঠিক একবছর আগে তুমি ঘর আলো করে এসেছিলে। জানো তো, তখন পারিবারিক বেশকিছু ছোট খাটো ঝুট ঝামেলা ছিলো, তুমি এসে সবকিছুকেই উড়িয়ে দিলে।

তুমি যেদিন এসেছিলে, সেদিন বড় মামা তোমার পাশে ছিলো না। কি যেন এক কাজে যেতে হয়েছিলো ঢাকায়। কিন্তু সেদিন ঠিকই তোমার পৃথিবীতে আসার খবর পেয়ে মামার চোখে আনন্দের অশ্রু ঝরেছিলো। এরই মধ্যে তোমার প্রায় সাড়ে তিন কোটিবার হৃদস্পন্দন হয়ে গেছে। প্রথম জন্মদিন পালন করছো বাবামা-ছোটমামা-নানানানি আর নিকটয়াত্নীয়দের সাথে। আজও আমি নেই তোমার পাশে। এবার আমি খুলনায়। ইয়ার ফাইনাল। তাই রাত জেগে বই নিয়ে বসে থাকতে হচ্ছে। যাহোক, ভাবছিলাম তোমাকে জন্মদিনে কি উপহার দিবো। এটাওটা ভাবার পর মনে হলো কাগজ কলম নিয়ে তোমার উদ্দেশ্যে মনের কথাগুলো লিখে ফেলি। এই চিঠি নিশ্চয়ই তোমার মা (আমার বড় বোন) অত্যন্ত সযত্নে রেখে দিবেন। তুমি যখন পড়তে শিখবে, তখন আমার হাতে লিখা এই চিঠি তুমি পড়বে। তখন তোমার কি অনুভূতি হবে সেটা চিন্তা করেই আমি লিখতে বসলাম। আমি যখন পৃথিবী থেকে চলে যাবো, তখনও হয়তো এই চিঠিটাই আমার স্মৃতি হয়ে তোমার সাথে থাকবে।

আমি কোন প্রত্যাশার ভার তোমার উপর চাপাতে চাইনা। খুব বেশী বয়স হয়নি আমার। মাত্র ২২। এক চিঠিতে এতোদিনের শিক্ষা একসাথে দেয়া সম্ভব নয়। সম্ভবত উচিতও নয়। শুধু কিছু বাস্তবতা তোমার কাছে তুলে ধরতে চাই। জানি, তোমার সময়ে আমার এইকথা অচল মনে হবে। তবুও চেষ্টা করবো কিছু বিষয় লিখতে যেগুলো সবসময়ের জন্য।

(এক) কিছু কাজ সবসময় করবে – প্রশ্ন করবে, বই পড়বে, সত্য বলবে, নামাজ-কালাম পড়বে এবং বাবামা’র কথা শুনবে।

(দুই) মনে কখনো এতোটুকু অহংবোধ রাখবেনা। যাকে হয়তো নাক শিটকায়, তোমার পরিনতি তো তার মতো বা তার চেয়েও খারাপ হতে পারতো। নিজেকে তাদের অবস্থানে নিয়ে একটু চিন্তা করবে।

(তিন) অনেক বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখবে, তবে লোভ করো না। লোভ মানুষকে অস্থির করে তোলে। টাকা নয়, বরং শান্তিকেই আগে বিবেচনা করবে।

(চার) নিজেকে কখনো, কখনো এবং কখনোই অন্যের সাথে তুলনা বা প্রতিযোগিতা করবেনা। প্রতিযোগিতা হবে শুধুমাত্র নিজের সাথে। নিজেকে ছাড়িয়ে যাও, এভাবে একসময় পৃথিবীকেই তুমি ছাড়িয়ে যেতে পারবে।

(পাঁচ) কখনো রাগ নয়, বরং যুক্তি দিয়ে জিতবে! হাসিমুখে থাকবে। অন্যকে গুরুত্ব দিবে। কান দুটো, চোখও দুটো, কিন্তু মুখ একটাই। তাই বেশী বেশী দেখবে ও শুনবে, কিন্তু কথা বলবে পরিমিত।

(ছয়) নিজেকে বিশ্বাস করবে, আর নিজের কাছে সৎ থাকবে। দুনিয়ার কেউ তোমাকে পরাজিত করতে পারবেনা। একই ভূল তুমি দ্বিতীয়বার করবেনা।
(সাত) কখনো নিজের উপর নিয়ন্ত্রন হারাবেনা, হাল ছেড়ে দেবেনা।

(আট) পৃথিবীতে সবকিছুই ক্ষণস্থায়ী, শুধুমাত্র পরিবর্তনটা ছাড়া। তাই সবসময় সবকিছুর জন্য প্রস্তুত থাকবে।

 

 

 

ইতি,

তোমার আদরের বড় মামা                                                                                                                    ইউসুফ মুন্না

 

Please follow and like us:
error0
fb-share-icon0
fb-share-icon20
Yusuf Munna is a Bangladeshi Social Entrepreneur, Writer and Activist. He is currently serving as the founder and CEO at Reflective Teens, an internationally recognized teen based creative platform working to expose, incite and incubate the creativity of teenagers. Yusuf frequently writes for different national English dailies including Dhaka Tribune and The Business Standard.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back To Top