জিপিএ ইনফ্লেশন, ইঁদুর দৌড় ও একটি প্রস্তাবনা

রিথিংকিং ইউনিভার্সিটি এডমিশন টেস্ট

Image result for ভর্তি পরীক্ষা
ছবি – ডেইলি বাংলাদেশ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক শিশির ভট্টাচার্য্য তার উচিৎ শিক্ষা বইতে লিখেছেন “সর্বোত্তম তোতাপাখি বাছাই করা নয়, প্রতিযোগিতামূলক পরিক্ষার মূল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত তথ্যের যৌক্তিক বিশ্লেষণে সক্ষম শ্রেষ্ঠ চৌকশ শিক্ষার্থীটিকে খুঁজে বের করা। ভাবতে শেখেনি, শুধু মুখস্থ করে উগরে দিতে শিখেছে- চোখ কান বন্ধ করে এমন প্রার্থীদের নির্বাচন করা হলে শিক্ষা, বিচার বিভাগ, প্রশাসন ও দেশ্রক্ষা – রাষ্ট্রের এই চতুরঙ্গের কোথাও গুণগত কোন পরিবর্তন আসবে না আরও বহু প্রজন্মে” 

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী থেকে শুরু করে সবাই বলেন শুধু জিপিএ ফাইভ নয়, বরং তাদের সহশিক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহনেও উৎসাহিত করতে হবে। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, প্রক্রিয়াটা এখন এমনভাবে সাজানো, সেখানে সহশিক্ষা কার্যক্রমে অংশনেয়াটা তো দূরে থাক, সামান্য দম ফেলারও ফুসরত নেই। সেই সকালে কোচিং দিয়ে শুরু, কোচিং থেকে স্কুল, স্কুল থেকে কোচিং, কোচিং থেকে বাসা, বাসায় এসে একটু বসতেই হোম টিউটর। সহশিক্ষা কার্যক্রমে যাওয়ার সময়টা কোথায় বলুন তো?  

স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়, মোদ্দা কথায় সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জিপিএকে বেশী গুরুত্ব দিচ্ছে বলেই খুব স্বাভাবিকভাবেই সংশ্লিষ্ট সবাই জিপিএ জিপিএ করছে। নাহলে বলুন তো কোন বাবামা চায় তাদের সন্তানদের সারাদিন গাধার মতো খাটাতে? বাবামাদের কি ইচ্ছে করেনা তাদের সন্তানদের খেলার মাঠে, পার্কে নিয়ে যেতে? ইচ্ছে করে না বসে গল্পগুজব করতে? ইচ্ছে করেনা কিছুদিন ছুটি নিয়ে পরিবারসহ কক্সবাজার থেকে ঘুরে আসতে? বাবামাদের তাই দোষ দিয়ে লাভ নেই। তারা যে নিরূপায়।

আমরা এতোই বেশী পরীক্ষা আর জিপিএমুখী হয়েছি যে, শিক্ষার আসল যে উদ্দেশ্য সেটাই আমরা ভূলে বসেছি। শিক্ষার বিষয়ে কথা বলতে গেলে জাপান কিংবা ফিনল্যান্ডের উদাহরণ শুনেছি অগনিত। তারা জিপিএ’র চেয়ে মানুষ হওয়াটাকেই প্রাধান্য দেয় বলেই তাদের দেশগুলো এতোটা এগিয়ে। মানুষগুলো নিয়েই তো আমাদের দেশ। যেদেশের মানুষ ভালো না সে দেশটা এমনিতেই ভালো হবে না – এটাই স্বাভাবিক। যে দেশে জীবনের নিরাপত্তা নেই, যে দেশে শান্তি নেই, সে দেশে আপনি ৬-৭ শতাংশ জিডিপি, বড় বড় সেতু কিংবা স্যাটেলাইট দিয়ে কি করবেন?

এইসএসসি পাস করার পর একজন ছাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য যে প্রস্তুতি নিয়ে থাকে সেটাকে মোটামুটি বিসিএস এর প্রস্তুতি বলা যায়। বিসিএস এর যে লিখিত পরীক্ষা সেটা একজন সদ্য এইসএসসি পাস ছাত্রকে কিছুদিন সময় দিলে সেও আয়ত্বে আনতে পারবে। তাহলে প্রশ্ন হলো যে পরীক্ষা এইসএসসি পাসের পরই দেয়া সম্ভব সেটা খামোকা চার বছর পরে দিতে যাবো কেন? অবশ্যই প্রযুক্তি, ডাক্তারি কিংবা স্থাপত্য সহ কিছু বিষয় আছে যেগুলোতে শুধু স্নাতক কেন, আরও অসীম জ্ঞান দরকার। তবে অবশ্যই সব বিষয়ে নয়। কেন আমরা কি দেখিনা যে ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে তাকে কাস্টমস অফিসে চাকরি করতে? দেখিনা এমবিএ করার পর গানের দল নিয়ে নেমে পড়তে? তাহলে তার স্নাতকের মূল্যটা কোথায়। এরকম অগনিত উদহারন দেয়া যায়। আমরা উচ্চশিক্ষাটাকে আবশ্যক বানিয়ে ফেলেছি। আসলে তো ব্যাপারটা তেমন নয়। আপনি বলতে পারেন, স্নাতক না করলে চাকরি পাবো কিভাবে? এজন্য সরকারকে যেমন শিক্ষার মাণ বাড়ানোয় মনোযোগ দিতে হবে, অন্যদিকে চাকরিদাতাদেরও বিষয়টা বুঝতে হবে।

বিশ্ববিদ্যালয় যেকোন দেশের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। সেখানকার ছাত্র, শিক্ষক এবং তাদের উদ্ভাবন ও চিন্তা চেতনা একটি দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমি মনে করি একটি দেশের বিশ্ববিদ্যালগুলোকে সত্যিকার অর্থেই বিশ্ববিদ্যালয় বানানো গেলে সে দেশ এমনিতেই এগিয়ে যাবে। নাহলে দেখুন না বিশ্বের বড় বড় সব উদ্ভাবন কিংবা প্রতিষ্ঠানের দিকে, সবকিছুর মূলে আছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র অথবা শিক্ষকগণ।

আমাদের দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার জন্য দুটো জিনিস চায় – এসএসসি এবং এইসএসসি’র জিপিএ এবং একটা বহু নির্বাচনী পরীক্ষা। বিশ্বের শীর্ষ সব বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক কিংবা স্নাতকোত্তর পড়তে গেলে এসএট বা জিআরই দিতে হয়। সেসব পরিক্ষায়ও প্রশ্ন হয় বহুনির্বাচনীতে। দুটোই বহুনির্বাচনী হলেও প্রশ্নের ধরনে আছে বিশাল তফাৎ। তারা যতোটা চিন্তাভাবনা করে প্রশ্নগুলো করেন, আমাদের শ্রদ্ধেয় শিক্ষকগন ততোটা সময় দেননা। তাই আপনি নির্দিষ্ট কিছু বইয়ের পুরোটুকু আয়ত্বে আনতে পারলেই কেল্লা ফতে। তাই এখানে একজন ছাত্রের স্মৃতি পরীক্ষা ছাড়া বিশ্লেষণী ক্ষমতা কিংবা চিন্তাশক্তিকে কোন গুরুত্বই দেয়া হয়না।

ওই যে বলছেন মানসিক বিকাশ, সেটার জন্য ছাত্রছাত্রীদের সহশিক্ষা কার্যক্রমে উৎসাহিত করতে হবে। কিন্তু সময় যে নাই? তাই ইঁদুর দৌড় থেকে মুক্তির সহজ সমাধান হতে পারে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরিক্ষায় জিপিএ’র পাশাপাশি তার হাইস্কুল এবং কলেজের সহশিক্ষা কার্যক্রমকে মূল্যায়ন করা। বিশ্বের নামীদামী বিশ্ববিদ্যালয়ে এটাই করা হয়। তারা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিচ্ছু ছাত্রছাত্রীর শুধু একাডেমিক নয় বরং দেখে সে কতো সময় স্বেচ্ছাসেবায় অংশ নিয়েছে। দেখে তার নেত্রিত্বের অভিজ্ঞতা আছে কিনা। দেখে সে কি ধরনের সৃজনশীল ও উৎপাদনশীল কাজের সাথে যুক্ত। এসব দেখে তারা সিদ্ধান্ত নেয় ভর্তিচ্ছু ছাত্রছাত্রী মানুষ হিসেবে কেমন। আমরাও এটাতে নজর দিলে অনেকগুলো অসাধারণ ব্যাপার ঘটে যাবে। যেমন পড়াশুনায় একঘেয়েমি আসবেনা, তাদের সৃজনশীল সত্বার বিকাশ ঘটবে, তারা অবসরে সৃজনশীল কাজে ব্যস্ত থাকায় বখে যাওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে, ছাত্রছাত্রীদের চিন্তাশক্তি প্রখর হবে, যোগাযোগ, দলগত কাজ, নেত্রিত্বের মতো গুণাবলী অর্জন করতে পারবে, মেধাবীরা সুযোগ পাবে, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ আরও সৃজনশীল হবে। সর্বোপরি বাবামা, ছাত্রছাত্রী কিংবা শিক্ষকগন – কেউই আর শুধু জিপিএ-জিপিএ করবেনা। আপনি বলতেই পারেন, সব ঠিক আছে, কিন্তু যে পদার্থবিজ্ঞান পড়তে চায় তার আঁকার গুণ বিবেচনা করা কি যুক্তিযুক্ত? আপনি নিশ্চয়ই জানেন আমাদের জামাল নজরুল ইসলাম অবসরে হারমোনিয়াম বাজিয়ে গান গাইতেন, আইনস্টাইন বেহালা বাজাতেন। এগুলোই ছিলো তাদের মনের খাদ্য, এগুলোই তাদের মাথা খুলে দিয়েছে।

অধ্যাপক শিশির ভট্টাচার্য্যে কথা দিয়েই শেষ করি – “সুদক্ষ, মননশীল, বৈষম্য, শ্রেনিবিদ্বেষ, সীমাহীন ও লজ্জাকর দুর্নীতি, অন্যপেশা বা অধস্তন্দের প্রতি উদ্ধত তাচ্ছিল্য এবং জবাবদিহির অভাবসহ আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্রযন্ত্রের যাবতীয় দুরারোগ্য ব্যাধির মূলেও হয়তো আছে এই করুন তোতাকাহিনি।” তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরিক্ষায় কেন সহশিক্ষা কার্যক্রমকে মূল্যায়ন করা হবেনা?    

বুক রিভিউ | একটা দেশ যেভাবে দাঁড়ায়

এক নাগাড়ে পড়ে শেষ করেছি এমন বই খুব কমই আছে আমার কাছে। একটা দেশ যেভাবে দাঁড়ায় সেরকম একটি বই। ড রউফুল আলমের বেশকিছু লেখা আমি প্রথম আলোয় পড়েছিলাম। মূলত সেগুলো ভালো লাগাতেই এই বই কিনতে আগ্রহী হই। নাম শুনে অনেকেরই ধারণা হতে পারে হয়তো রাজনীতি আর অর্থনীতির কাঠখোট্টা বিষয় দিয়ে সাজানো বইটি। আসলে তেমনটি নয় মোটেও। এটি পুরোদমে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে লেখা একটি বই যেখানে দেশের অন্যান্য ইস্যুগুলোকেও শিক্ষার দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা হয়েছে। দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অতিমাত্রায় বিসিএস প্রীতি, একর দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাণ মাপা, বিশ্ববিদ্যালয়ের গন্ডিটাকে গোটা দুনিয়া ভেবে বসে থাকার বিষয়গুলো যেমন আলোচনা হয়েছে, তেমনি আলোচিত হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ, গবেষণায় কুম্ভিলতা, পদন্নোতির মতো বিষয়গুলো।

ছবিতে বই ও লেখক // ড রউফুল আলম

লেখক তার পড়াশুনা ও গবেষণার স্বার্থে ইউরোপ আর আমেরিকার নানান প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন। মূলত তিনি তার অভিজ্ঞতা থেকে বিভিন্ন বিষয় ছোট ছোট আর্টিকেলে তুলে ধরেছেন। লেখক বইয়ে দেশের উন্নতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকার কথা তুলে ধরেছেন। এই বইয়ে তিনি কিছু বিষয় নিয়ে এসেছেন যা আপনাকে নতুন করে ভাবতে শেখাবে। বিদেশে থাকা দেশের মেধাবী গবেষকদের ফিরিয়ে এনে কিভাবে দেশ ও দশের স্বার্থে কাজে লাগানো যায় তা নিয়ে অনেকবার বিভিন্নভাবে বিভিন্ন দেশের উদহারন দিয়ে দেখিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের গবেষণার চাইতে রাজনীতিতে বেশী সময় দেয়ার সমালোচনা করেছেন। হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট হয়ে যায় কিন্তু গণিত অলিম্পিয়াড, জুনিয়র সায়েন্স অলিম্পিয়াডের মতো উদ্যোগগুলোকে ফান্ডিং করার জন্য রাষ্ট্রের টাকা থাকেনা এমন বিষয়গুলোকে টেনে এনেছেন। প্রশ্ন করেছেন, ক্রিকেট খেলোয়াড়দের যদি এতো এতো পুরস্কার দেয়া যায় তাহলে রাষ্ট্র কেন বিভিন্ন অলিম্পিয়াডের মেডালিস্টদের কিছু দিবেননা। তাছাড়াও আমাদের অভিভাবকদের নিয়েও বেশকিছু বিষয় আলোচিত হয়েছে এই বইয়ে। সবমিলিয়ে দেশের মেধাবীদের পরিচর্যা, মেধাবীদের মূল্যায়ন, তাদের দেশে ফিরিয়ে আনা, গবেষণায় মনোযোগ বাড়ানো নিয়ে প্রাঞ্জল ভাষায় লেখা এই বইটি শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক কিংবা একজন নাগরিক – সবার জন্যই একটি চোখ খুলে দেয়ার মতো ও সুখপাঠ্য।

প্রকাশ করেছে সমগ্র প্রকাশনী। বইয়ের গায়ের মূল্য ৩০০টাকা। তবে মেলা থেকে ২৫% ছাড়ে ও বিকাশে পেমেন্ট করা সাপেক্ষে অতিরিক্ত ১০% ছাড়ে বইটি কিনতে পাওয়া যাবে। তাছাড়া রকমারিতেও পাওয়া যাচ্ছে বইটি।         

জীবনের দর্পণে আত্ন প্রতিবিম্ব

ব্লগে আগের লেখাগুলো আউড়াচ্ছিলাম। একদম আগের দিকের লিখাগুলো পড়ার পর কেন জানি নিজের কাছেই অপরিচিত মনে হচ্ছে। নিজের অজান্তে সময় দ্রুত এগুচ্ছে। বোধহয় আগের স্মৃতিগুলো এতোদিনের স্মৃতি আর অভিজ্ঞতার নীচে চাপা পড়ে যাচ্ছে। জীবন তো এমনই। আমরা খুব জাগতিক হয়ে যাচ্ছি। একটা হাতে পাওয়ার পর অন্যটা, তারপর অন্যটা, আবার… এভাবেই আমরা ছুটছি অদ্ভুত এক রেসে। এমনভাবে চলছি যেনো আমরা পৃথিবীতে অনন্তকাল থেকে যাবো। একদিন সব শেষ হয়ে যাবে ~ এ চিন্তাটাই আমাকে অন্তত গতো কয়দিন অস্থিরতা থেকে মুক্তি দিয়েছে।

যেমন ধরুন আমি গতো কয়েক মাস ধরে আমার হাইস্কুল জীবন নিয়ে প্রচন্ড হা-হুতাশা করছি। মনের ভেতর কেমন জানি একটা শূণ্যতা কাজ করছে। আমার চোখে স্পষ্ট ভাসছে হাইস্কুলের প্রথম দিনের কথা। আব্বু আর আপু আমাকে স্কুলে দোতলায় তুলে দিয়ে চলে যাচ্ছিলো পেছনের গেট দিয়ে, আমি দাঁড়িয়ে দেখছিলাম আর কাঁদছিলাম। সেদিনের প্রতিটি ঘটনা চাইলেই বিস্তারিত বিবরন দিতে পারবো। অথচ সে দিনটা আজ থেকে নয় বছর আগে ফুরিয়ে গেছে। আমি কিন্ডারগার্টেনে পড়ার সময়ই যতো দুষ্টুমি করেছি। তাও শুধু ক্লাস রুমের ভেতরে। স্মৃতি যদি প্রতারনা করে তাহলে এরপরে আমি আর দুষ্টুমি করিনি। যাহোক, যেখানে ছিলাম – হাইস্কুল নস্টালজিয়া। মাসখানেক আগে খোলা এক ফেসবুক গ্রুপে প্রাক্তনদের স্মৃতিচারণা দেখেই নিজের স্মৃতিগুলো মাথায় আসছিলো। খেয়াল করেছি, আমরা বর্তমানটাকে এতোটাই প্রাধান্য দিই যে, সেটাকে উপভোগ করতে ভূলে যাই। আমরা ভূলে যাই যে, এই বর্তমানটাই একসময় অতীত হয়। হাইস্কুল শেষ, শেষ কলেজও। তাই ভেবেছি বিশ্ববিদ্যালয়টাকেই উপভোগ করার চেষ্টা করবো। তাতে অন্তত হাইস্কুল নিয়ে যতোটা শূন্যতা তৈরি হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে ততোটা হবেনা।

ওয়ার্ক-লাইফ ব্যাল্যান্সটা বোধহয় আমার বেশ দরকার। আমার কাছে ব্যাল্যান্স না হয়ে ব্লেন্ড হয়ে গেছে। কোনটা কাজের সময় আর কোনটা ফ্রেন্ডস এন্ড ফ্যামিলিকে দেয়ার সময় সেটা পার্থক্য করা আমার কাছে জটিল হয়ে পড়েছে। রাতে এভাবে-সেভাবে দুটো বেজে যায় ঘুমোতে ঘুমোতে। সেকারনে সকালে উঠতে মোটামুটি আটটা বেজে যায়। তারপর গোটা দিন দিন ভার্সিটিতেই কাটে। সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত অল্প সময়টুকু না দিবো একাডেমিকে, নাকি ব্যাক্তিগতো পড়াশোনা, না বন্ধুদের, নাকি পরিবার? এটা আমার পূর্বের “বর্তমানকে উপভোগ করো” নীতির বাস্তবায়নে এখনো পর্যন্ত প্রধান বাঁধা। এই চক্র থেকে বের হওয়ার জন্য দিনটাকে বড় করতে হবে।

নিজের হাতে যতোটুকু সময় পাই তার একটা বড় অংশ বই পড়ায় কাটাচ্ছি আপাতত। একটা স্কেচবুক কিনেছি সেদিন। তাই টুকটাক এটাসেটা আঁকছি। আঁকার বেশ লাভ আছে বলে মনে হয়েছে। কিছু একটা এমনিতে দেখা একরকম, কিন্তু আঁকতে গেলে সেটা ভিন্ন। দেখাটা খুব বিস্তারিত এবং তীক্ষ্ণ হতে হয়। এটা আমাকে সাময়িক চিন্তামুক্তি (?!) দেয়, দেয় মনোযোগের পরিচর্যা আর ধীরস্থির ভাব। ও হ্যাঁ, প্রশান্তিও। তবে ব্যক্তিগত পড়াশুনাটাকে আরেকটু সুনির্দিষ্ট করতে চাচ্ছি। অনেকগুলো বিষয়ে না পড়ে যদি একটা বিষয়ের বই/ব্লগ পড়া যায় তাহলে দক্ষতা আর চিন্তাগুলো আরও গভীর হবে নিশ্চয়ই।

—-

কিঞ্চিৎ প্রাসঙ্গিকঃ লিখালিখি শুরু করেছি ক্লাস ফোরে থাকতে। পত্রিকায় প্রথম লিখেছিলাম সে ২০১৪ সালে। ব্লগিংও সমসাময়িক সময়ে। বিজ্ঞানবিশ নামের একটা ব্লগ ছিলো তখন। সেখানে লিখতাম। সেখান থেকে ওমর ভাই, আহমাদ ভাই, ইব্রাহিম ভাই, কামরুজ্জামান ইমন, সালমান সাকিব সহ সেসময়ের বেশকয়েকজন বিজ্ঞান ব্লগারের সাথে পরিচয়। এই ডোমেইন কিনি ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৭তে। এখানে অল্পকিছু লেখা সংরক্ষণ করেছি মাত্র। এখন কিছুটা নিয়মিত হওয়ার চেষ্টা করছি। ব্লগের হিটস দশ হাজার ছুঁইছুঁই। কীবোর্ড ও আমার এ সম্পর্ক হোক আমৃত্যু। দোয়া রাখবেন। ভালো থাকবেন।

২০২০ : অসামাজিক হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা নাটকীয়তা পেরিয়ে এলো ২০২০। ইউএস প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচনের বিতর্কিত বিজ্ঞাপন, ক্রমাগত সংবেদনশীল তথ্য ফাঁস কিংবা মূলধারার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কাছে হুমকি হয়ে টিকটকের আবির্ভাব এবং বীরদর্পে এগিয়ে চলতে থাকা… কম নাটকীয়তা নয় নিশ্চয়ই।

ক্রমাগত এসব সমূল পরিবর্তনে মানুষ কিভাবে নিবে আসছে বছর? সম্প্রতি হটস্যুটের করা জরিপের ফলাফল বিশ্লেষণ থেকে ২০২০ সালের জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কেন্দ্রিক উল্লেখযোগ্য কিছু ধারণা তুলে ধরা হলো…

SOCIAL MEDIA GETS LESS SOCIAL

বিতর্ক যেনো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর পিছু ছাড়ছে না। মানুষেরইবা এতো ঠেকা পড়লো কিসে? তাই তারা বস্তুত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে সরে আসছে। তাই তারা বেছে নিচ্ছে তুলনামূলক অধিক গোপনীয়তা রক্ষাকারী ক্লোসড গ্রুপ বা হোয়াটসএপ এর মতো শুধু বার্তা আদান-প্রদানের মাধ্যমগুলো। জরিপ বলছে ৬৩% মানুষ তাদের কনটেন্টগুলো প্রাইভেট যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ভাগাভাগি করতে অধিক স্বাচ্ছন্দ বোধ করছে যা ২০২০ সালে আরও বাড়তে থাকবে। ফেসবুকের প্রধান মার্ক জাকারবার্গ একই কথা বলেছেন ২০১৮ সালে তাদের বার্ষিক ডেভেলপার সম্মেলন এফএইট এ। তিনি বলেছেন ‘দ্যা ফিউচার ইজ প্রাইভেট’। ফেসবুকের প্রাইভেট মেসেজিং, মাইডে বা ছোট ছোট গ্রুপের অত্যন্ত দ্রুত বৃদ্ধিও তাই বলে।

তাই চাহিদার সাথে তাল মিলিয়ে ইন্সটাগ্রামের ক্যামেরা ফার্স্ট মেসেজিং এপ ‘থ্রেড’, লিংকডইনের ‘টিমমেট’ বা ফেসবুকের নতুন ‘পোর্টাল ডিভাইসের’ মতো বিষয়গুলো ইন্টোডিউস করানো হচ্ছে।

COMPANIES GROW A BACKBONE ON SOCIAL MEDIA 

টুইটার থেকে শুরু হওয়া #মিটু আন্দোলন গোটা দুনিয়াতে সাড়া ফেলে দিয়েছে। হাটে ভেঙ্গেছে অসংখ্য হাড়ি। বেরিয়েছে মস্তবড় বিড়ালগুলো। সরেছে অনেকের মুখোশ। এমন যখন পরিস্থিতি, তখন নড়েচড়ে বসেছে দুনিয়াটা। ভাবছে নতুন করে। জরিপ বলছে ৭৩% মানুষ বিগত বছরের চেয়ে অধিক সচেতন কোম্পানি এথিকস এর ব্যাপারে। শুধু তাই নয়, ৬৭% মানুষ কোন কোম্পানি ভ্যালু’র সাথে বনিবনা না হলে সে কোম্পানিতে কাজই করতে আগ্রহী না।

তাই আসছে কোম্পানিগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোকে আরও গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করবে। খুব চেষ্টা করবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজেদের আরও দারুনভাবে তুলে ধরার। ‘লেভি স্ট্রোস’ এর নিউইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জে চমৎকার অভিষেকের বিষয়টা দেখা যাক… পরিবেশ সচেতনতা, অস্ত্র নিয়ন্ত্রন আইন, এলজিবিটিকিউ অধিকার – এসব বিষব বিষয়ে সচেতন পদক্ষেপ ও ভূমিকা তাদের এই সুবিধা এনে দিয়েছে। অন্যদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পেপসি কিংবা জিলেট এর সাম্প্রতিক ব্যর্থ ক্যাম্পেইনগুলোর দিকে তাকালেই বুঝা যাবে আগের মতো আর অগভীর বিষয়গুলো মানুষকে কাছে টানতে পারছে না।

TIKTOK EXPLODES . . . ONE WAY OR THE OTHER

অনেকটা হুট করেই টিকটক আমাদের নজরে আসে তাদের লিপসিংক ভিডিও দিয়ে। যদিও প্রথমে খুব হাল্কাভাবেই টিকটক নিয়েছিলো, কিন্তু পরে বুঝা গেছে বিষ্যটা আসলে ততটা হাল্কা নয়। মার্ক জাকারবার্গ ও তার ফেসবুক বেশ অস্বস্থিতে আছে টিকটককে নিয়ে। সব এপস্টোরে দীর্ঘদিন ধরে টিকটক আছে শীর্ষ ৩ এর মধ্যে। শুধু তাই নয়, তাদের দৈনিক সক্রিয় ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৮০০ মিলিয়ন। কি এমন জাদু যা তাদের অল্প সময়ে গগনচুম্বী জনপ্রিয়তা দিয়েছে? হতে পারে সেটা বিজ্ঞাপনের পেছনে তাদের কাড়ি কাড়ি টাকা ব্যয়। দৈনিক শুধু বিজ্ঞাপনের পেছনেই ব্যয় করছে ৩মিলিয়ন ডলার! আবার টার্গেট মার্কেট নির্বাচনে সুকৌশলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহারও এটার কারন হতে পারে। তবে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ যেটা, ব্যবহারকারীদের ইচ্ছেমতো ব্যবহার করার স্বাধীনতা, সৃজনশীলতা প্রকাশের সুযোগ ও সাথে একটু মজা করার সুযোগই তাদের এমন জনপ্রিয়তা দিয়েছে।

প্রশ্নহলো ২০২০ সালে টিকটক কি পারবে এমন জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে? চীনা কোম্পানি হওয়াতে ব্যবহারকারিরা অবশ্য বেশ সন্ধিহান তাদের কাছ থেকে নেয়া তথ্যগুলো টিকটিক কিভাবে ব্যবহার করবে সে ব্যাপারে। প্রকৃতপক্ষ্যে কিছু দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করলে টিকটক যে হারে নতুন ব্যবহারকারী পাচ্ছে, প্রায় একই হারে হারাচ্ছেও।

তালমিলিয়ে চলাটা টেক জায়ান্টদের কাছে নতুন কিছু নয়। টিকটকের ক্রমধাবমান জনপ্রিয়তা দেখে ২০১৮ সালে ফেসবুক ‘লেসো’ নামের একটা একই ধরনের এপ শুরু করেছিলো যা বলতে গেলে মোটেও জায়গা করে নিতে পারেনি। তবে ফেসবুকের মালিকানাধীন আরেক প্রতিষ্ঠান ইন্সটাগ্রামের টিকটক এর ক্লোন সার্ভিস ‘রিল’ মনে হয় সুবিধা করতে পারছে। ২০১৯ সালের শেষ কোয়ার্টার পর্যন্ত তাদের ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন ব্যবহারকারী রয়েছে। দেখা যাক…

THE INCENTIVE SYSTEM ON SOCIAL MEDIA (FINALLY) EVOLVES

কোথাও যাওয়ার পথে একজায়গায় ভিড় দেখলে আমরা এক মুহূর্তের জন্য অন্তত দেখে যাই আসলে কি হচ্ছে সেটা দেখার জন্য। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও আমরা সেরকম। যে পোস্টে লাইক, লাভ, ওয়াও আব কমেন্ট বেশী সেটাই দেখি। এভাবে আমরা নিজেদের হারিয়ে ফেলছি অন্যের আগ্রহের গহীনে। বিষয়টা নিয়ে অবশ্য বেশ সক্রিয় উদ্বেগ আর উদ্যোগ দেখা দিয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর।

সম্প্রতি কিছু অঞ্চলে প্রথমিকভাবে পোস্টে পাবলিকলি তাদের লাইক বা কমেন্ট সংখ্যা দেখানো বন্ধ করেছে। উদ্দেশ্য এংগেইজমেন্টগুলোকে আরও অর্থবহ করা। ফেসবুক, টুইটারও একই পথে আগাচ্ছে ধীরে ধীরে। যার ফলস্বরূপ মানুষের আগ্রহের বৈচিত্রতা দেখা যাবে এবং ইনফ্লয়েন্সারদের জনপ্রিয়তায় বিশাল ধ্বস নামবে।

AD OVERLOAD REACHES A CRISIS POINT

টিভি থেকে প্রজম্নের অনলাইনমুখী হওয়ার দুটো কারন। ব্যস্ততা বেড়ে যাওয়ায় সুবিধা মতো সময়ে পছন্দের কনটেন্ট দেখা এবং যতোটা সম্ভব বিজ্ঞাপন এড়িয়ে যাওয়া। বিজ্ঞাপন কতোটা বিরক্তিকর সেটা বুঝা যায় বাংলাদেশ-ভারতের একদিনের ম্যাচের ফাঁকে ফাঁকে। একই ঝামেলা বোধহয় অনলাইনেও আমাদের জেঁকে বসেছে। মিসলিডিং বিজ্ঞাপনের পরিনতি যে ভয়াবহ হতে পারে সেটা দেখা যায় মার্কিন নির্বাচনের দিকে তাকালে। সে অন্য এক বিশাল কাহিনী।

বলা হচ্ছে অনলাইনে বিজ্ঞাপন এখন তার তুঙ্গে অবস্থান করছে। শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই ৮৬ মিলিয়ন ব্যবহারকারী এডব্লকার দিয়ে ২০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের বিজ্ঞাপন এড়িয়ে চলেন। গবেষনা বলে, ব্যবহারকারীরা মোটেও বিজ্ঞাপন পছন্দ করেন না।

কিন্তু ঝামেলা বিজ্ঞাপন থাকলে এতো বড় কোম্পানি চলবে কিভাবে? ফেসবুকের মোট আয়ের ৯৮% আর টুইটারের ৮৫% আসে বিজ্ঞাপন থেকে। কোন বিকল্প কি নেই? অবশ্যই আছে। আয়ের উৎসের বিকেন্দ্রিকরন অবশ্য প্রয়োজন। উইকিপিডিয়ার প্রতিষ্ঠাতা জিমি ওয়েলস ডব্লিউটি সোশ্যাল নামে ফেসবুকের প্রতিদ্বন্দ্বী একটি প্ল্যাটফর্ম দাড় করানোর চেষ্টা করছেন যার আয়ের প্রধান উৎস হলো ডোনেশন। আবার উইচ্যাট বা কিউকিউ এর প্যারেন্ট কোম্পানি টেনসেন্ট এর আয়ের মাত্র ১৭% আসে বিজ্ঞাপন থেকে। বাকি আয় আসে গেমিং (৩৭%), ই-কমার্স (২৩%) বা অন্য প্রিমিয়াম ভেল্যু এডেড সার্ভিস (২৪%) থেকে।

মোটাদাগে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের জন্য ২০২০ সাল হতে যাচ্ছে বেশ পরিবর্তনের একটা সময়। ব্যবহারকারী, বিশেষকরে রাজনীতিবিদরা বেশী এবং আরও বেশী প্রত্যাশা করছেন। সময়ের সাথে সাথে আমরা আমাদের এই কানেক্টেড ওয়ার্ল্ডের প্রতিবন্ধকতাগুলোকে আরও আবিষ্কার করছি এবং চেষ্টা করছি দীর্ঘস্থায়ী সমাধান আনতে। তবে সে সমাধান কতোটুকু কার্যকরী বা গ্রহনযোগ্যতা পাবে? সেটা দেখতে হলে অপেক্ষা করতে হবে ২০২০ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচন পর্যন্ত।

ফাস্ট কোম্পানি অবলম্বনে।

ABOUT THE AUTHOR

Ryan Holmes is the CEO of Hootsuite, a social media management system with more than 10 million users. A college dropout, he started a paintball company and pizza restaurant before founding Invoke Media, the company that developed Hootsuite in 2009. Today, Holmes is an authority on the social business revolution, quoted in The New York Times and Wall Street Journal and called upon to speak at TEDx and SXSW Interactive Conferences

ভদ্র কিন্তু দুর্বল নয়

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো ক্রমেই আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিনত হয়েছে। কোথাও ঘুরতে গেলাম কিংবা খেতে গেলাম কোন রেস্টুরেন্টে কিন্তু ফেসবুক-ইন্সটাগ্রামে কোন ছবি আপলোড দিলাম না – তা আমরা চিন্তাই করতে পারিনা। উদ্দেশ্য মানুষকে নিজের ক্লাস দেখানো আর বুঝানোর চেষ্টা করা, আরেকজনকে জানাতে চেষ্টা করা নিজে আরেকজন থেকে কতোটা এগিয়ে। অবস্থাটা এমন, আমরা ফেসবুক-ইন্সটাগ্রামে লাইক-কমেন্ট-ফলোয়ার সংখ্যা এসব দেখেই তার সামাজিক অবস্থান পরিমাপ করা শুরু করেছি।

নম্রতা, এমন একটা গুণ যা অন্যকে কাছে টেনে আনে। নম্রতা শব্দটি এসেছে গ্রিক শব্দ ‘হিউমাস’ থেকে যার বাংলা অর্থ দাঁড়ায় ‘পৃথিবী’ – অর্থাৎ ‘ডাউন টু দ্যা আর্থ’। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের এই রমারমা সময়ে নম্রতার বড্য প্রয়োজন।

ঝামেলা হলো, এই সময়ে কেউ নম্রতার চর্চা করতে গেলে বাকিরা তাকে দুর্বল বা অযোগ্য ভেবে থাকতে পারেন। আসলে ব্যাপারটা তার উল্টো। হোক সেটা অফিসে, বা বন্ধুদের সামনে অথবা চাকরীর সাক্ষাৎকারে – নম্রতা আপনাকে অসাধারণ একটা ইম্প্রেশন তৈরি করতে সাহায্য করে।

চলুক দেখে নেয়া যাক এমন কিছু উপায় যা অবস্থানকে পোক্ত রেখে আপনাকে নম্রভাবে উপস্থাপন করবে।

GRACIOUSNESS

সবাই জানে একটা কাজ একা করা যায়না। কাজ করতে গিয়ে বিভিন্ন জন বিভিন্নভাবে অবদান রাখেন। বস, মেন্টর, টিম, কলিগ, ফ্যামিলি, ফ্রেন্ডস – সবাবই কিছু না কিছু ভূমিকা থাকে। তাই নিজের সফলতার গল্প বলার সময় তাদের অবদান স্বীকার করুন, কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন।

আমিত্ব পরিহার করুন। পরিবর্তে বলুন আমরা। এতে মনে করতে পারেন আপনার ভূমিকা সঠিকভাবে মূল্যায়িত হচ্ছে না। আসলে ব্যাপারটা তার উল্টো। আমরা বলাটা আপনার ভূমিকাকে বরং বড় করে তুলবে।

চাকরীর সাক্ষাৎকারে বোর্ডে থাকা লোকজন গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেন আপনার কথায় কথায় আমি আমি করছেন কিনা। আমরা শব্দটার ব্যবহার বুঝায় আপনি কতোটা টিমপ্লেয়ার, আপনি একজন লিডার কিনা। তাই আমি বাদ দিয়ে আমরা চর্চা করা উচিত।

MODESTY

আপনার অর্জনের কথা আপনি অবশ্যই বলবেন। আপনাকে মূল্যায়ন করার জন্য এটা জানানো দরকার। তবে সেক্ষেত্রে একটু সচেতন হতে হবে। এমনভাবে বলতে হবে যাতে মনে না হয় আপনি ফুলিয়ে-ফাপিয়ে বলছেন। একটু হিউমারের আশ্রয় নিলে এমন পরিস্থিতি এড়িয়ে যাওয়া যাবে।

তবে অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে, মডেস্টি দেখাতে গিয়ে যাতে আবার আন্ডার এস্টিমেট হয়ে না যায়।

AUTHENTICITY

সম্প্রতি টেসলার সাইবার ট্রাক এর লঞ্চিং এ ইলন মাস্ক কে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়েছিলো। যদিও দাবী করেছিলেন তার ট্রাকের জানালার কাচ ‘শ্যাটারপ্রুফ’ কিন্তু একটা মেটাল বলের আঘাতেই সবার সামনে কাচ ভেঙ্গে যায়। এটা নিশ্চিত যে ইলন তার প্রোডাক্ট ডেভেলপমেন্টে অনেক সময় ও শ্রম দিয়েছেন। তারপরও এমন একটা ঘটনা ঘটে গেলো, তাও আবার একপ্রকার গোটা দুনিয়ার সামনেই। ইলন তখন সে ঘটনাকে মোটেও ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেননি। বরং দোষ স্বীকার করে নিয়েছেন, বিষয়টাকে সবার সামনে বিশ্লেষণ করেছেন।

আপনিও ভূলভ্রান্তির উর্ধে নন। তাই কোন চাকরীর সাক্ষাৎকারে আপনার অর্জন কিংবা গুণগুলো বলার পাশাপাশি সীমাবদ্ধতাগুলোও তুলে ধরুন। এতে তারা আপনাকে অধিকতর যোগ্য মনে করবে। কারন তারা বুঝতে পারবে আপনি সৎ, নিজের সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে অবগত এবং সর্বপোরী নিজেকে ভালোভাবে চিনেন।

RESPECT

নেতৃত্বের অন্যতম গুণ হলো শ্রদ্ধাশীলতা। বড় বড় নেতারা সবসময় অন্যকে শ্রদ্ধা করেন। তারা কাউকে নীচু করে দেখেননা। বরং অন্যকে সচেতনভাবে শুনেন এবং বুঝার চেষ্টা করেন। আপনিও তাদের অনুসরন করতে পারেন। সেজন্য আপনাকেও তাদের মতো শুনতে হবে, যা বলবেন তা করতে হবে, জাতপাত নির্বিশেষে সবাইকে সমান চোখে দেখতে হবে।

ফাস্ট কোম্পানি অবলম্বনে অনুদিত।    

ABOUT THE AUTHOR

Judith Humphrey is founder of The Humphrey Group, a premier leadership communications firm headquartered in Toronto. She also recently established EQUOS Corp., a company focused on delivering emotional intelligence training to the fitness, medical, and business sectors

বিদেশে উচ্চশিক্ষা : হাইস্কুল ছাত্রের যা জানা দরকার

সম্প্রতি আমার দিন কাটছে কোরা’তে অদ্ভুত ও দারুণ সব প্রশ্নের উত্তর পড়ে ও মাঝে মাঝে উত্তর দিয়ে। এক পিচ্চির প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে লক্ষ্য করলাম লিখতে লিখতে বেশ বড় হয়ে গেছে। তাছাড়াও প্রশ্নটার উত্তর জানতে চান এমন মানুষের সংখ্যা দিনকেদিন বাড়ছে। তাই ভাবলাম, একই উত্তরটা বরং আমার ব্লগেও দিয়ে দিই। মন্দ হয়না।

প্রশ্নটা ছিলো – চট্টগ্রামের এক সরকারি বিদ্যালয়ে পড়ি। আগামী বছর ইনশাআল্লাহ নবম শ্রেণীতে উঠবো। আমি কি এই বয়সে বিদেশের বিদ্যালয়ে পড়ালেখার জন্য আবেদন করতে পারব?

প্রশ্নকর্তা বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয় বলতে গিয়ে কোনভাবে বিদ্যালয় বলে ফেলেছেন কি? যাহোক, যদি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে হয় তাহলে দুটো জিনিস প্রধানত প্রয়োজন – (এক) স্যাট বা এসিটি এর যেকোনোটা দেয়া এবং (দুই) আইএলটিএস দেয়া।

প্রথমে স্যাট এর কথায় আসি। স্যাট বা SAT হলো ১৬০০ নম্বরের একটা পরীক্ষা যেটাতে ৪টা ভাগ থাকে। রিডিং, রাইটিং, এবং গনিত। গনিতের অবশ্য দুটো ভাগ আছে। ক্যালকুলেটর সহ এবং ক্যালকুলেটর ছাড়া। এই স্যাট পরীক্ষা নেয়া হয় মূলত আপনার একাডেমিক দক্ষতা দেখার জন্য। চাইলে নিজে নিজে প্রস্তুতি নিতে পারেন। আবার কোচিং এ পড়াও সম্ভব। চট্টগ্রামে আমি হাসনাঈন স্যারের কাছে পড়েছিলাম এটার জন্য। উনি জিইসি মোড়ে, সানমারের উত্তর পাশে পড়ান। তবে পরিক্ষার ফি এবং কোচিং ফি – দুটোই একটু খরচ সাপেক্ষ।

তারপর আসে আইএলটিএস। অনেকেরই ভূল ধারণা থাকে আইএলটিএস সম্পর্কে। ভাবে যে শুধু আইএলটিএস দিয়েই বিদেশে যাওয়া সম্ভব। এ ধারণা পুরোপুরি ভূল না, আবার সঠিকও না। বলছি – আইএলটিএস হলো ভাষাগত দক্ষতা বুঝানোর একটা উপায় মাত্র। এটা মূলধারার পড়াশোনার সাথে সরাসরি সম্পরকিত নয়। তাই এটা দেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের আপনার সম্পর্কে পোক ধারণা করা কোন উপায় নেই।

আপনাকে অবশ্যই স্যাট দিতে হবে যদি আপনি বিশ্বের শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো (বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) যেমন- হার্ভার্ড, ইয়েল, প্রিন্সটন, এমআইটি এসবে যেতে চান। সাথে বিশ্ববিদ্যালয় সরাসরি না চাইলেও অন্ততপক্ষ্যে সে দেশের ভিস পাওয়ার জন্য হলেও আইএলটিএস দরকার।

আপনি শুধু আইএলটিএস দিয়েও ইউরোপের বেশকিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে পারেন। তবে সে ক্ষেত্রে তাদের ভাষায় আপনাকে পড়তে হবে। তবে এটা ঠিক যে, সেসব ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় নিজ গরজেই আপনার জন্য সে দেশের ভাষার কোর্স রাখবে। তবুও নতুন নতুন ভাষা শিখে জীবন চালাতে পারলেও একাডেমিক কাজে কতটুকু ফলদায়ক হবে তা অত্যন্ত চিন্তার বিষয়।

তাছাড়াও আরও অত্যন্ত বিবেচ্য বিষয় হলো সহশিক্ষাক্রমিক কার্যক্রম। বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গোটা দুনিয়ার সবচেয়ে মেধাবীরা প্রতিযোগিতা করে। তাই, ওখানে দেখা যাবে স্যাট ১৬০০ তে ১৬০০ পেয়েছেন এবং আইএলটিএস এ ৯ এ ৯ পেয়েছেন এমন অনেকেই আবেদন করবেন। তাহলে আপনি কোথায়? এ যায়গায় স্ট্যান্ডআউট করার জায়গা হলো আপনার সহশিক্ষাক্রমিক কার্যক্রম। এটা এতোই গুরুত্বপূর্ণ যে কখনো কখনো সব থেকে বেশী বিবেচনার বিষয় হয়ে দাঁড়ায় ভর্তি বা স্কলারশিপ দুটোর জন্যই। এছাড়াও আবেদন প্রক্রিয়ায় যেসব জায়গায় এসে বা রচনা লিখতে হবে সেখানে বলার মতো কিছু গল্পও তৈরি হয় সহশিক্ষাক্রমিক কার্যক্রমে অংশ নেয়ার মাধ্যমে।

তার মান এই নয় যে আপনাকে ফিজিক্স বা গনিত অলিম্পিয়াডে গোল্ড পেতে হবে। এমন কিছু দেখাতে হবে যেট অর্থবহ। এমনও অনেক ঘটনা আছে যে, ম্যাথ অলিম্পিয়াডে গোল্ড মেডালিস্টকে প্রত্যাখান করা হয়েছে।

আরেকটা বিষয়, ধরুন হার্ভার্ড লিডারশিপ এক্টিভিটিজকে প্রাধান্য দেয়। অন্যদিকে এমআইটি দেয় গবেষনামূলক কাজকে। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ে মতিগতিও বুঝতে হবে। তার মানে আবার এটা নয় যে হার্ভার্ড শুধু ফিউচার লিডারদেরই নিবে বা এমআইটি শুধু গনিত পদার্থ অলিম্পিয়াডে মেডালিস্টদেরই নিবে। তাদের ভাষায় – নির্বাচন প্রক্রিয়ায় তারা একটা ব্যালেন্সড টিম তৈরি করার চেষ্টা করে।

আসলে কেউই বলতে পারবেনা আপনি সুযোগ পাবেন কি পাবেন না। শুধু আল্লাহ আর নির্বাচক কমিটি জানেন। শুভকামনা থাকলো।

ফেসবুকে একটা গ্রুপ আছে – Bangladeshis Beyond Border: Undergrad Admission Info Portal এখানে আপনার প্রশ্ন করতে পারেন। আবার ফাইল সেকশানে অসংখ্য সহায়ক ফাইল আছে। সেগুলোও চেক করতে পারেন।

কোরা’তে আমার প্রোফাইল লিংক হলো এটা। ঘুরে আসতে পারেন।