জীবনের দর্পণে আত্ন প্রতিবিম্ব

ব্লগে আগের লেখাগুলো আউড়াচ্ছিলাম। একদম আগের দিকের লিখাগুলো পড়ার পর কেন জানি নিজের কাছেই অপরিচিত মনে হচ্ছে। নিজের অজান্তে সময় দ্রুত এগুচ্ছে। বোধহয় আগের স্মৃতিগুলো এতোদিনের স্মৃতি আর অভিজ্ঞতার নীচে চাপা পড়ে যাচ্ছে। জীবন তো এমনই। আমরা খুব জাগতিক হয়ে যাচ্ছি। একটা হাতে পাওয়ার পর অন্যটা, তারপর অন্যটা, আবার… এভাবেই আমরা ছুটছি অদ্ভুত এক রেসে। এমনভাবে চলছি যেনো আমরা পৃথিবীতে অনন্তকাল থেকে যাবো। একদিন সব শেষ হয়ে যাবে ~ এ চিন্তাটাই আমাকে অন্তত গতো কয়দিন অস্থিরতা থেকে মুক্তি দিয়েছে।

যেমন ধরুন আমি গতো কয়েক মাস ধরে আমার হাইস্কুল জীবন নিয়ে প্রচন্ড হা-হুতাশা করছি। মনের ভেতর কেমন জানি একটা শূণ্যতা কাজ করছে। আমার চোখে স্পষ্ট ভাসছে হাইস্কুলের প্রথম দিনের কথা। আব্বু আর আপু আমাকে স্কুলে দোতলায় তুলে দিয়ে চলে যাচ্ছিলো পেছনের গেট দিয়ে, আমি দাঁড়িয়ে দেখছিলাম আর কাঁদছিলাম। সেদিনের প্রতিটি ঘটনা চাইলেই বিস্তারিত বিবরন দিতে পারবো। অথচ সে দিনটা আজ থেকে নয় বছর আগে ফুরিয়ে গেছে। আমি কিন্ডারগার্টেনে পড়ার সময়ই যতো দুষ্টুমি করেছি। তাও শুধু ক্লাস রুমের ভেতরে। স্মৃতি যদি প্রতারনা করে তাহলে এরপরে আমি আর দুষ্টুমি করিনি। যাহোক, যেখানে ছিলাম – হাইস্কুল নস্টালজিয়া। মাসখানেক আগে খোলা এক ফেসবুক গ্রুপে প্রাক্তনদের স্মৃতিচারণা দেখেই নিজের স্মৃতিগুলো মাথায় আসছিলো। খেয়াল করেছি, আমরা বর্তমানটাকে এতোটাই প্রাধান্য দিই যে, সেটাকে উপভোগ করতে ভূলে যাই। আমরা ভূলে যাই যে, এই বর্তমানটাই একসময় অতীত হয়। হাইস্কুল শেষ, শেষ কলেজও। তাই ভেবেছি বিশ্ববিদ্যালয়টাকেই উপভোগ করার চেষ্টা করবো। তাতে অন্তত হাইস্কুল নিয়ে যতোটা শূন্যতা তৈরি হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে ততোটা হবেনা।

ওয়ার্ক-লাইফ ব্যাল্যান্সটা বোধহয় আমার বেশ দরকার। আমার কাছে ব্যাল্যান্স না হয়ে ব্লেন্ড হয়ে গেছে। কোনটা কাজের সময় আর কোনটা ফ্রেন্ডস এন্ড ফ্যামিলিকে দেয়ার সময় সেটা পার্থক্য করা আমার কাছে জটিল হয়ে পড়েছে। রাতে এভাবে-সেভাবে দুটো বেজে যায় ঘুমোতে ঘুমোতে। সেকারনে সকালে উঠতে মোটামুটি আটটা বেজে যায়। তারপর গোটা দিন দিন ভার্সিটিতেই কাটে। সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত অল্প সময়টুকু না দিবো একাডেমিকে, নাকি ব্যাক্তিগতো পড়াশোনা, না বন্ধুদের, নাকি পরিবার? এটা আমার পূর্বের “বর্তমানকে উপভোগ করো” নীতির বাস্তবায়নে এখনো পর্যন্ত প্রধান বাঁধা। এই চক্র থেকে বের হওয়ার জন্য দিনটাকে বড় করতে হবে।

নিজের হাতে যতোটুকু সময় পাই তার একটা বড় অংশ বই পড়ায় কাটাচ্ছি আপাতত। একটা স্কেচবুক কিনেছি সেদিন। তাই টুকটাক এটাসেটা আঁকছি। আঁকার বেশ লাভ আছে বলে মনে হয়েছে। কিছু একটা এমনিতে দেখা একরকম, কিন্তু আঁকতে গেলে সেটা ভিন্ন। দেখাটা খুব বিস্তারিত এবং তীক্ষ্ণ হতে হয়। এটা আমাকে সাময়িক চিন্তামুক্তি (?!) দেয়, দেয় মনোযোগের পরিচর্যা আর ধীরস্থির ভাব। ও হ্যাঁ, প্রশান্তিও। তবে ব্যক্তিগত পড়াশুনাটাকে আরেকটু সুনির্দিষ্ট করতে চাচ্ছি। অনেকগুলো বিষয়ে না পড়ে যদি একটা বিষয়ের বই/ব্লগ পড়া যায় তাহলে দক্ষতা আর চিন্তাগুলো আরও গভীর হবে নিশ্চয়ই।

—-

কিঞ্চিৎ প্রাসঙ্গিকঃ লিখালিখি শুরু করেছি ক্লাস ফোরে থাকতে। পত্রিকায় প্রথম লিখেছিলাম সে ২০১৪ সালে। ব্লগিংও সমসাময়িক সময়ে। বিজ্ঞানবিশ নামের একটা ব্লগ ছিলো তখন। সেখানে লিখতাম। সেখান থেকে ওমর ভাই, আহমাদ ভাই, ইব্রাহিম ভাই, কামরুজ্জামান ইমন, সালমান সাকিব সহ সেসময়ের বেশকয়েকজন বিজ্ঞান ব্লগারের সাথে পরিচয়। এই ডোমেইন কিনি ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৭তে। এখানে অল্পকিছু লেখা সংরক্ষণ করেছি মাত্র। এখন কিছুটা নিয়মিত হওয়ার চেষ্টা করছি। ব্লগের হিটস দশ হাজার ছুঁইছুঁই। কীবোর্ড ও আমার এ সম্পর্ক হোক আমৃত্যু। দোয়া রাখবেন। ভালো থাকবেন।