ভ্যাকসিনের গণতন্ত্রায়ন

গোটা দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়ছে করোনা ভাইরাস। উত্তর থেকে দক্ষিণ, ধনী থেকে গরিব কোন দেশ মুক্তি পায়নি এই মহামারী থেকে। এর ফলে স্তব্ধ হয়ে পড়েছে অর্থনীতির চাকা। মৃত্যু ঝুঁকির মুখোমুখি সব মানুষ। ভ্যাকসিন আসার আগ পর্যন্ত বিশ্বনেতাদের কপালের ভাজ সরার উপক্রম নেই। ভ্যাকসিন নেয়ার সুবিধা হলো, এতে একদিকে যেমন নিজের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকেনা, অন্যদিকে ছড়িয়ে পড়ার আশংকাও প্রবলভাবে কমিয়ে দেয়। যেটা হার্ড ইমিউনিটি অর্জনের জন্য অত্যাবশ্যক। তাই সবার মনে একই চাওয়া – কবে আসবে ভ্যাকসিন? সংশ্লিষ্টরা বলছেন ১২ থেকে ১৮ মাস পর্যন্ত লেগে যেতে পারে। যারা এটাকে বেশ দেরি মনে করছেন তাদের জানিয়ে রাখি, সর্বশেষ ২০১৫ সালের জিকা ভাইরাসের সময় ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্য একটা সম্ভাব্য ভ্যাকসিন পেতেই লেগে গিয়েছিলো সাত মাস। সে তুলনায় এই কোভিড-১৯ এর জিন রহস্য উন্মোচনে লেগেছে শুধু চারমাস। আর সেটা হয়ে যাওয়ার মাত্র ৬৪ দিনের মাথায় চীন প্রথমবারের মতো সম্ভাব্য এক ভ্যাকসিন ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে পাঠাতে সক্ষম হয়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, এখন পর্যন্ত দুটি ভ্যাকসিন ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের পথে। ক্লিনিক্যাল ইভ্যালুয়েশনে আছে আরও অন্তত ৫০টি সম্ভাব্য ভ্যাকসিন। সবচেয়ে জোরেসোরে এবং বড় পরিসরে যারা কাজ করছেন, জনসন এন্ড জনসন তাদের অন্যতম। গতো মার্চ মাসে তারা মার্কিন সরকারের সাথে ১ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি সই করেছে যার লক্ষ্য বিশ্বব্যাপী ১ বিলিয়ন ডোজের সমপরিমাণ ভ্যাকসিন উতপাদনে যাওয়া। তারা জানিয়েছেন, প্রতি ডোজ ভ্যাকসিনের মূল্য পড়তে পারে ১০ ডলারের মতো। ব্রিটিশ অ্যামেরিকান টোব্যাকোও তাদের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ক্যান্টাকি বায়োপ্রোসেসিং এর সহযোগিতায় ভ্যাকসিন আবিষ্কার ও নিজস্ব দ্রুত উৎপাদনশীল প্ল্যান্ট ব্যবহার করে উৎপাদনের আগ্রহ দেখিয়েছে। তবে, ব্যাট এর মতো তামাকজাতকারী প্রতিষ্ঠানের ভ্যাকসিন উৎপাদনে আইনগত সম্মতি পাওয়া প্রধান বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে নিঃসন্দেহে।

ধনী দেশগুলোর পর্যাপ্ত বরাদ্ধ সব নাগরিককের জন্য ভ্যাকসিন উৎপাদন ও উন্নত অবকাঠামো সবাইকে দ্রুত ভ্যাকসিনের আওতায় আনতে পারবে। কিন্তু অর্থ ও অবকাঠামো – এই দুই দিক থেকেই পিছিয়ে থাকা দক্ষিনের দেশগুলোতে আসতে কতো দিন লাগবে সেটা চিন্তার বিষয়। আমরা দেখতে পেয়েছি শুরু থেকেই বিজ্ঞানীরা একসাথে কাজ করে উচ্চ মনুষ্যত্বের পরিচয় দিয়েছেন। ভ্যাকসিন সংশ্লিষ্ট উদ্ভাবনগুলো সবার আগে জার্নালে প্রকাশ করে খ্যাতি অর্জনের চিন্তাকে বাদ দিয়ে অন্য বিজ্ঞানীদের সাথে ভাগাভাগি করে গবেষণা এগিয়ে নেয়াকে বেশী গুরুত্ব দিয়েছেন। বিশ্বনেতারা করোনা ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে বাজেভাবে ব্যর্থ হয়েছেন। অন্তত এইবার কি পারবেন একটু আশার আলো দেখাতে? সেটা সময় বলবে। তবে আগের একটা উদহারন টানা যায়। ২০০৯ সালে প্রথম ইনফ্লুয়েঞ্জা ভ্যাকসিন উৎপাদনে যায় অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু দুঃখজনকভাবে সে দেশের সরকার বিদেশে রপ্তানির বদলে নিজের সব নাগরিকদের জন্য নিশ্চিতে চাপ প্রয়োগ করে। এখনো পর্যন্ত কোন দেশ এবিষয়ে আইনগত কোন পরিবর্তন এনেছে কিনা আমার জানা নেই। যদি তাই হয়ে থাকে, তাহলে গোটা বিশ্ব আবারও অনিশ্চয়তার মুখে পড়বে।

শুধু কি ন্যায্যতার বিচারে দরিদ্র দেশে দ্রুত ভ্যাকসিন পৌঁছানো জরুরী? মোটেও না। দরিদ্র দেশগুলোতে দেরিতে ভ্যাকসিন পৌঁছালে উন্নত দেশও সমস্যায় পড়বে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, যেকোন দুটি দরিদ্র দেশে ভ্যাকসিন ৩০দিন পর পৌঁছালে অন্যদুটি উন্নত দেশে আক্রান্তের হার ২.৭৫% বৃদ্ধি পেতে পারে। তাহলে বাঁধা কাটিয়ে উঠতে এখন থেকে কি প্রস্তুতি নেয়া যেতে পারে? দরিদ্র দেশের সরকারগুলোর আর্থিক সক্ষমতা নেই সবার জন্য ভ্যাকসিনের ব্যবস্থা করার। অন্যদিকে দুর্বল অবকাঠামোর কারণে সবার কাছে পৌঁছে দেয়া সত্যিই কঠিন হবে। সরকার এককালীন না হলেও ধাপে ধাপে অর্থের সংস্থান করতে পারে। তাই তাদের কথা বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় ঋণ নিশ্চিত করতে হবে। তাছাড়াও দরিদ্র দেশগুলোর প্রত্যন্ত অঞ্চলের ক্লিনিকগুলোতে পর্যাপ্ত ফ্রিজিং ব্যবস্থা কিংবা বিদ্যুতের মতো নির্ভরযোগ্য অবকাঠামো তৈরিতে মনোযোগী হতে হবে। যেহেতু ভ্যাকসিন কুক্ষিগত করার একটা সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে, তাই সময় থাকতে এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট আইনের পরিবর্তন ও প্রয়োজনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নেতৃত্বে চুক্তি সই হতে পারে।

কিন্তু সমস্যা হলো, যদি অধিকাংশ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান করোনা ভ্যাকসিন উৎপাদনে মনোযোগী হয়, তাহলে ইনফ্লুয়েঞ্জা, হাম বা রুবেলার মতো অন্য রোগের ভ্যাকসিন উৎপাদনে ভাটা পড়বে। সে সুযোগে সেসব রোগগুলো নতুন করে বাড়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে কিনা সেটাও বিবেচনায় রাখা প্রয়োজন। যেহেতু আমাদের এখনো করোনা ভ্যাকসিন হাতে আসতে আরও বছর দেড়েক সময় আছে, এর মধ্যে সম্ভাব্য সমস্যা থেকে রক্ষায় উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। উল্লিখিত বিষয় সমূহে কর্তৃপক্ষের এখনই কাজ শুরু করা প্রয়োজন। অন্যথায়, এতোদিনে সমস্ত ত্যাগ, কষ্ট আর পরিশ্রম ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে।   

বাংলাদেশকে নিয়ে আমি আশাবাদী। আমাদের আছে ব্র্যাকের মতো মানুষের সাথে মিশে থাকা এনজিও। আছে ঘরে ঘরে পোলিওর টিকা পৌঁছে দেয়ার অভিজ্ঞতা। আছে উদ্যোগী তরুণ। আছে বিদ্যানন্দের মতো জানপ্রান ঢেলে কাজ করার লোক। আমরা পারবোই ইনশাল্লাহ।

Hello EdinburghX: SOCRMx

It feels really great to get enrolled for the course titled “Introduction to Social Research Methods”. Heartful gratitude to the University of Edinburgh and EdX for allowing me to explore social research methodology.

করোনায় অর্থনীতি, পর্যালোচনায় বাংলাদেশ

সম্পূর্ণ অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে আগাচ্ছে গোটা বিশ্ব। তবে এবারই প্রথম পৃথিবীর সবগুলো মানুষ একসাথে একই রকম অনুভূতি ভাগাভাগি করছে। আমরা দেখেছি প্রতি একশ বছর পরপর পৃথিবীকে এমন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হচ্ছে। ১৭২০ সালে প্লেগ, ১৮২০ সালে কলেরা, ১৯২০ সালে স্প্যানিশ ফ্লু। আর ২০২০ সালে এসে করোনা।

পূর্বের যেকোনো সময়ের তুলনায় এখন গোটা দুনিয়ার সব মানুষ খুব কাছাকাছি। অন্য মহামারীতে যদিও মৃত্যুর হার এখনকার তুলনায় অনেক বেশী ছিলো, তাও এতোটা বিস্তৃত হয়নি। এই অতিমাত্রার যোগাযোগ ভাইরাসকে দ্রুত ছড়াতে সাহায্য করেছে। নভেম্বর ২০১৯ সালে চীনের উহান শহরে প্রথম নভেল করোনা ভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর থেকে এই নিবন্ধ লিখা পর্যন্ত সাড়ে বাইশ লাখের বেশী মানুষ সংক্রমিত হয়েছে। মারা গেছে দেড় লাখের বেশী। গবেষকেরা দেখেছেন এই ভাইরাসের আর নট (R naught) মান ২.৪। অর্থাৎ, প্রতি একজন আক্রান্ত থেকে নতুন ২.৪ জন মানুষের কাছে এটা ছড়াচ্ছে।

গবেষকরেরা মনে করেন এই রোগের ভ্যাকসিন পেতে আমাদের অন্তত ১৬ থেকে ১৮ মাস লাগবে। যেহেতু ভ্যাকসিন না পাওয়া পর্যন্ত কেউই নিরাপদ নয়, তাই চাইলেও কোন দেশ তার স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু করতে পারবেনা। তাহলে নতুন করে শুরু হতে পারে সংক্রমন। চীনে ইতিমধ্যে সেটা দেখা গেছে। তবে আশার ব্যাপার হলো, এমন মহামারী পৃথিবীর কাছে নতুন নয়। প্রযুক্তি যেহেতু যেকোনো সময়ের চেয়ে উন্নত, শুরু থেকে সব অর্থনীতিবীদ আর বিজ্ঞানীরা একসাথে কাজ করছেন, তাই দ্রুত ভালো একটা কিছু আশা করাই যায়।

ইতিমধ্যে অনেক লোক মারা গেছেন, যাদের অধিকাংশই গ্লোবাল নর্থে। সামনে আরও অনেকেই মরবে। এতো উন্নত অবকাঠামো সত্ত্বেও তারা বেশ ভালোভাবেই টের পাচ্ছে কতো ধানে কতো চাল। আফ্রিকা আর এশিয়ার অধিকাংশ দেশই তাদের তুলনায় সবদিকে পিছিয়ে। তাই বলা যায় ক্রান্তিকালের প্রায় পুরোটুকুই বিশ্বের এখনো বাকি। দুর্বল অর্থনীতি, দুর্বল অবকাঠামো, দুর্বল সরকার ব্যবস্থা – তিনে মিলে সামগ্রিক অবস্থার দফারফা হবে বাংলাদেশ সহ অন্যান্য দরিদ্র দেশসমূহে। স্বাভাবিকভাবে দেখা যায় প্রতিটি মহামারির পর অর্থনীতিতে রিসেশন শুরু হয়। এই রিসেশনের পর দারিদ্রতা। সেখান থেকে দেখা দেয় অরাজকতা। এই মরার উপর খড়ার ঘা মোকাবেলার ক্ষমতা কতোটুকু আছে আমাদের সেটা অবশ্যই চিন্তার বিষয়।                     

স্ট্যাটিস্টার করা এক জরিপে দেখা গেছে দেশের সবচেয়ে বেশী মানুষ কাজ করে সার্ভিস সেক্টরে (প্রায় ৩৯.৭৬ শতাংশ)। কৃষি ক্ষেত্রে প্রায় সমানে সমান (৩৯.৭১ শতাংশ)। ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করে প্রায় সাড়ে বিশ শতাংশ। এদিকে আইএলও বলছে, ক্ষেত্রগুলোর মধ্যে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করে প্রায় ৮৫ .১ শতাংশ মানুষ। সংখ্যায় যেটা ৫ কোটি ১৭ লাখ ৩৪ হাজার।

যারা সরকারী চাকুরি করেন, তারা ঠিকঠাক তাদের চাকরী ফেরত পাবেন। মহামারী পরবর্তী সরকারী কার্যক্রম বৃদ্ধি পাওয়ায় সরকারী চাকুরির সংখ্যা কিছু বাড়বে বরং। যারা বড় বেসরকারি কোম্পানিতে কাজ করেন, তাদেরও খুব বড় সমস্যা হওয়ার কথা না। সরকারী সাহায্য আদায় করে নেয়ার ক্ষমতা, কাঠামোগতো শক্তি ও দক্ষতা এবং ঝুঁকি মোকাবেলার তহবিল মিলিয়ে দেরিতে হলেও কাটিয়ে উঠতে পারবেন তারা। দেশের অর্থনীতির প্রধান দুই ভীত গার্মেন্টস শিল্প ও প্রবাসি শ্রমিকেরা উন্নত দেশ নির্ভর। ফলে উন্নত দেশের সাথে সাথে তাদের পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হওয়ার কথা।  

মূল সমস্যা হবে এই ইনফরমাল সেক্টরের। ইনফরমাল সেক্টর এমনিতেই ভঙ্গুর এবং ঝুঁকিপূর্ণ। তাদের নির্দিষ্ট কোন পে-রোল/বেতন নেই। যে যার মতো কাজ বা ব্যাবসা করছেন। শুধু তাই নয়, এই সেক্টরে কর্মরতদের একেকজনের উপর একেকটা পরিবার নির্ভরশীল। একদিকে করোনাকালীন ব্যবসা লাটে উঠায় তাদের আয়ের পথ বন্ধ হবে, অন্যদিকে করোনা দীর্ঘসময় ধরে প্রভাব বজায় থাকার ফলে জমাকৃত টাকাও ফুরিয়ে যাবে। আবার, ইনফরমাল সেক্টরের লোকেরাই বড়সড় ভোক্তাশ্রেনি। ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পাওয়ায় বাজার থেকে একটা বড় ভোক্তাশ্রেণি কিছুসময়ের জন্য হলেও হারিয়ে যাবে।

তাদের জন্য সরকার যদি পর্যাপ্ত সাহায্য দেয়ও, সেগুলো নানান জটিলতায় অল্পকিছু মানুষের হাতে থেকে যাবে (ইতিমধ্যে চাল ও তেল চুরির কথা জানেন নিশ্চয়ই)। ফলে তাদের সামগ্রিক অবস্থা আরও সূচনীয় হবে। এই পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনীতি জিইয়ে রাখার কাজে ভালো ভূমিকা রাখতে পারতো ব্যাংক। কিন্তু ব্যাংকের এখন যে অবস্থা, তাতে তারা সে পরিমাণ মানুষকে ঋণ দিতে পারবে কিনা, বা আদও চাইবে কিনা (যেহেতু বাজার ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যাওয়ায় খেলাপির আশংকা প্রবল হবে), অথবা ইচ্ছা বা প্রচেষ্টা থাকলেও থাকলেও সেটা রাঘব-বোয়ালের বাইরে কারও হাতে আসবে কিনা সেটাও চিন্তার বিষয়।

সরকার ইতিমধ্যে বেশ বড় অংকের প্রনোদনা ঘোষণা করেছে। সামনে হয়তো আরও করবে। কিন্তু সে প্রনোদনা সমালোচনার মুখোমুখি। দেশের সবচেয়ে বড়, পরিপক্ষ এবং ধনী গার্মেন্টস মালিকদের জন্য যেখানে ২% সুদে ঋণ দেয়ার কথা বলা হয়েছে, সেখানে দরিদ্র কৃষকেরা পাচ্ছেন ৫% হারে। সরকার অবশ্যই চাইবে বড় শিল্পগুলোকে বাঁচাতে। তাদের জন্য সরাসরি প্রনোদনা দিবে। সে প্রনোদনা আবার স্বীয়যোগ্যতাবলে নিশ্চিতভাবে পৌঁছাবে তাদের কাছে। সবাই হয়তো ট্রিকল ডাউন ইফেক্ট আউড়াবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, শিল্পের মালিকেরা না চাওয়া পর্যন্ত ট্রিকলডাউন ইফেক্টের সর্বোচ্চটা পাওয়া অসম্ভব। এতোদিনের মন্দার পর তাদের মুনাফালোভী ও পুঁজিবাদী চিন্তা আরও প্রখর হবে। তাই সে আশাও গুড়েবালি।

শেষমেশ সবচেয়ে কষ্টে পড়বে ইনফরমাল সেক্টরের লোকজন। মানে, দেশের সংখ্যা গরিষ্ঠরা। পুঁজি যা ছিলো, সব শেষ। সাহায্য হাতে পৌঁছাচ্ছেনা। ঋণ দিতে চাইবেনা ব্যাংক। কোনোভাবে চলতে থাকা জীবন আরও খাদের কিনারায় পৌঁছাবে। যদিও বাজারের চাহিদা আগের তুলনায় কিছুটা বাড়ার কথা, পুঁজির অভাবে আগের মতো কিছু একটা শুরু করা কঠিন হয়ে পড়বে। হয়তো আলো দেখাতে পারে এনজিওরা। তাদের হাত ধরে বেশকিছু মানুষ আবার নতুন উদ্যমে শুরু করবে। ধীরে ধীরে তাদের প্রসার বাড়বে। তাদের হাত ধরে নতুন আরও কিছু মানুষ ফিরে আসবে আলোতে।

করোনা পরবর্তী ব্যবসাগুলো বিশ্বায়নের বদলে স্বদেশের মাঝেই সর্বোচ্চটুকু পাওয়ার চেষ্টায় রত থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এটা দেশীয় শিল্পগুলোর বিকশিত হওয়ার জন্য দারুণ সুযোগ বটে। ইয়োভাল নোয়া হারারির সাথে মিলিয়ে বলতে চাই, গোটা দুনিয়াটা একটা এক্সপেরিমেন্ট এর মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ওয়ার্ক ফ্রম হোম বা ইউনিভার্সাল ব্যাসিক ইনকামের মতো ব্যাপারগুলো এখন আবশ্যিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। এগুলোই ধীরে ধীরে নিয়মে পরিনত হবে। বলেছিলাম, বিজ্ঞানীরা দ্রুত আগাচ্ছে ভ্যাকসিনের দিকে। ভ্যাকসিন আবিষ্কারের পর সেটা উত্তর ঘুরে দক্ষিণ পর্যন্ত আসতে কতোদিন লাগবে, সেটা সবার হাতে পৌঁছানোর সামর্থ্য আছে কিনা, অথবা মহামারী পরবর্তী পরপর আসন্ন ঝুঁকিগুলো ঠিক কীভাবে কাটিয়ে উঠবে সেসব নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়ে যায়।

রবীন্দ্রনাথের কবিতা দিয়ে শেষ করতে চাই – মেঘ দেখে তোরা করিসনে ভয়, আড়ালে তার সূর্য হাসে। আজ বা কাল, এই করোনাও অতীত হয়ে যাবে। কিন্তু যে শিক্ষাগুলো আমাদের দিয়ে যাচ্ছে, সেগুলো কাজে লাগানো গেলে সামনের পথ অনেক সহজ হবে নিশ্চয়ই।        

অনলাইনে পরিচয় ১০১

ফেসবুক, টুইটার, লিংকডইন কিংবা মেইল – প্রযুক্তির এই সময়টাতে প্রতিনিয়তই আমরা নতুন মানুষের সাথে পরিচিত হতে হয়। সাধারণ মানুষ তো বটেই, অনেক প্রভাবশালী লোকের সাথেও আপনার শখ্যতা তৈরি হতে পারে। তার জন্য আপনাকে এই ডিজিটাল টুলগুলোর যথাযথ ব্যবহার জানতে হবে। মেনে চলতে কিছু শিষ্টাচার। চলুন দেখে নেয়া যাক কিছু আচরণ যা করা মোটেও উচিৎ নয়।

(১) মেইল পাঠানোর পর অনেকে প্রতিউত্তরের আশায় বসে থাকেন। উদগ্রীব থাকেন মেইল পেয়েছেন কিনা সেটা জানার জন্য। এডাম গ্রান্ট, হোয়ারটন বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রফেসর। তার মতে, ইলেকট্রনিক রিটার্ন রিসিপ্ট সেকেলে ধারণা। যেহেতু আপনি মেইলের ডেলিভারি স্ট্যাটাস নোটিফিকেশন পেয়েছেন, আপনার বুঝতে হবে মেইলটা ঠিকঠাক পৌঁছেছে। আর, উত্তর না পেলে মন খারাপের কিছু নেই। কয়েক সপ্তাহ পর আবার পাঠানোর সুযোগ তো আছেই!     

(২) ধরুন আপনার একটা প্রোডাক্ট আছে। যদি একজন ইনফ্লুয়েন্সার আপনার সে প্রোডাক্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করেন, নিশ্চয়ই আপনার নিক্রি বেড়ে যাবে? কীভাবে পৌঁছাবেন ইনফ্লুয়েন্সারদের কাছে? আপনার প্রোডাক্ট এবং সাথে এক লাইনে কীভাবে প্রোডাক্টটা তার সাথে সম্পর্কিত সেটা লিখুন। এখানেই শেষ। যদি তিনি আগ্রহ খুঁজে পান, অবশ্যই নিজ দায়িত্বে শেয়ার করবেন।       

(৩) প্রথমবারের মতো কোন এক্সপার্টকে মেইল করে কখনোই আপনার উদ্যোগ, ধারণা বা সেবা সম্পর্কে পরামর্শ চাইতে যাবেন না। এরজন্য দীর্ঘ সম্পর্ক ও জানাশোনা প্রয়োজন যেটা আপনার নেই। আপনি বরং কোন সুনির্দিষ্ট বিষয়ে প্রশ্ন করতে পারেন। জানতে চাইতে পারেন অভিজ্ঞতা বা দৃষ্টিভঙ্গি। তবে পরামর্শ নয়।

(৪) সদ্য পরিচিত হওয়া কাউকে কখনো সাক্ষাতের আমন্ত্রন করবেন না। মাসদুয়েক সময় গড়াতে দিন। তার সুবিধাজনক সময়ে ফোনে কথা বলার অথবা সাক্ষাৎ করার চেষ্টা করুন।

(৫) পরিচয় হতে না হতেই আরেকজনের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে বলবেন না। তারচেয়ে বরং তাকেই আপনি আপনার প্রয়োজনটার কথা বলুন। যদি মনে করেন, উনিই পছন্দসই একজনকে পরিচয় করিয়ে দিবেন।

এতক্ষণে জানা গেলো কীভাবে পরিচিত হতে হবে সেটা। এখন জানবো, পরিচিত হওয়ার পর কি করবেন না সেটা।

(৬) সুন্দর, মার্জিত উত্তর পেয়ে ভেবে বসবেন না তিনি আপনার সাথে বন্ধুত্ব করতে চান। বারবার মেইল করে ইনবক্স ভর্তি করবেন না। সব প্রশ্ন একজায়গায় লিখুন। পরে মাস শেষে একদিন পাঠিয়ে দিন।

(৭) বলে বেড়াবেন না আপনার সাথে অমুক তমুকের খাতির আছে। নিজে পরিচিত হওয়ার কদিনের মধ্যে আরেকজনকে পরিচয় করিয়ে দিতে যাবেন না। বরং জানতে চাইতে পারেন “একজন আপনার সাথে এই বিষয়ে কথা বলতে চায়। আপনি কি আগ্রহী?”        

(৮) পরিচিত হওয়ার কদিনের মধ্যে একসাথে কাজ করার আমন্ত্রন জানানো অনেকটা “প্রথম ডেটিং’র পরই বিয়ের প্রস্তাব” দেয়ার মতো। তাই আগে আলোচনা করুন। দেখুন এতে দুজনেরই উপকার হয় কিনা।

হোয়ারটন বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপক, এডাম গ্রান্টের ব্যাক্তিগত ব্লগ অবলম্বনে লিখেছেন ইউসুফ মুন্না।

বিশ্ববিদ্যালয় ও একটি উন্নত দেশের স্বপ্ন

একটি দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের চেহারা বোঝা যায় সে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের চেহারায় তাকিয়ে। একটা মানসম্পন্ন বিশ্ববিদ্যালয় তার আশেপাশের এলাকার আমূল পরিবর্তন এনে দিতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র করে দেশবিদেশের মেধাবীরা ভিড় জমায়। হয়ে উঠে আবিষ্কার-উদ্ভাবনের কেন্দ্রস্থল। জানার অবারিত সুযোগ তৈরি হয়। সেখানে চলে মুক্তচর্চা, থাকে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা। বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা লোকের সাথে মেলামেশা ছাত্রছাত্রীদের উদার ও প্রগতিশীল করে তোলে। সেখান থেকে বের হয় বিশ্বসেরা উদ্ভাবক, উদ্যোক্তা আর প্রতিষ্ঠান।   

দেশে একের পর এক নতুন বিশ্ববিদ্যালয় হতেই আছে। সরকারী-বেসরকারি মিলিয়ে যা ১৫০ এর উপরে। কিন্তু শিক্ষার মান বাড়ছে খুব একটা। বরং কমছেই বলা চলে। আন্তর্জাতিক র‍্যাংকিংগুলো যে বিষয়গুলো প্রাধান্য দেয়া হয় তার অন্যতম হলো প্রকাশিত ছাত্রশিক্ষক অনুপাত, পিএইচডিধারী গবেষক ও গবেষণাপত্রের সংখ্যা, ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টর, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর উপস্থিতি, প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীদের জবপ্লেসমেন্ট এসব। বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক র‍্যাংকিং এ আমাদের শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর স্থান থাকে নীচের সারিতে। তার মানে আমরা বিবেচিত বিষয়গুলোর প্রায় সবগুলোতেই পিছিয়ে আছি।

শুধু ২০১১-২০১২ অর্থ বছরেই লন্ডন শহরের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রায় ৬বিলিয়ন ইউরোর সমপরিমান অবদান রেখেছে। তার মাধ্যমে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সৃষ্টি হয়েছে নতুন ১লাখ ৪৫হাজার ৯২১টি চাকরী। তাহলে দেশীয় বিশ্ববিদ্যালগুলোর প্রভাব কিংবা ভূমিকাটা কেমন? জরিপ বলছে দেশের ৪৭% গ্র্যাজুয়েট বেকার। আমরা দেখি ভারত, চীন আর শ্রীলংকানদের আধিপত্য রয়েছে দেশের গার্মেন্টস সেক্টরের শীর্ষপদগুলোতে। ৩ লাখ বিদেশী নাগরিক প্রতিবছর ৪০ হাজার কোটি টাকা এখান থেকে নিয়ে যাচ্ছে। তার মানে বিশ্ববিদ্যালগুলো ছাত্রছাত্রীদের মানসম্পন্ন শিক্ষা দিতে পারছে না, বাজারের চাহিদা পূরণ করতে পারছে না। উন্নত দেশগুলোর দিকে তাকালে দেখতে পাই তারা অঢেল টাকা খরচ করছেন বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয় তৈরিতে। চায়নার China’s 985 প্রোজেক্ট, জাপানের Centres of Excellence, কোরিয়ার Brain Korea 21, এবং জার্মানির Centres of Excellence প্রোজেক্ট এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য।      

তাহলে আমাদের সরকার কেন মান বাড়ানোর দিকে নজর না দিয়ে সংখ্যায় নজর দিচ্ছে? যুক্তি আছে বটে – আমেরিকার ‘ন্যাশনাল ব্যুরো অফ ইকোনমিক রিসার্চ’ এর গবেষকদের করা এক গবেষণা বলছে একটা দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির সাথে সেদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যার খুব পোক্ত সম্পর্ক রয়েছে।          

৭৮টি দেশের ১৫০০ এলাকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে পরিচালিত এই গবেষণা বলছে “কোন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা দ্বিগুণ করা হলে সে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৪% পর্যন্ত বাড়তে পারে” 

কি? বিশ্বাস হচ্ছে না? “The contribution of university rankings to country’s GDP per capita” শিরোনামে ঠিক একই ধরনের একটি গবেষণা করেছেন নটিংহ্যাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মালয়েশিয়া ক্যাম্পাসের গবেষকেরা, যারাও একই কথাই বলছেন। তারা আরও বলছেন “এই আশানুরূপ জিডিপি প্রবৃদ্ধি পেতে হলে শুধু অল্পকিছু বিশ্বসেরা বিশ্ববিদ্যালয় তৈরির চেয়ে ভালোমানের অনেকগুলো বিশ্ববিদ্যালয় তৈরির দিকেই মনোযোগ দিতে হবে” – সমস্যা হলো আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বাড়াতে পারলেও তার একটা সম্মানজনক মান দিতে ব্যর্থ।   

আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সমস্যায় ঠাসা। নোংরা রাজনীতির কালো থাবা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সব সম্ভাবনা ধুলোয় মিশিয়েছে। ছাত্রছাত্রীদের ভর্তি পরীক্ষা, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ, পরিচালনা – এমন কোন স্তর নেই যেখানে পচন ধরায়নি। তার ফলে মেধার প্রকাশ, বিকাশ আর পরিচর্যার কেন্দ্রস্থল হওয়ার বদলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হয়ে উঠছে আবর্জনার ভাগাড় আর মেধাবীদের মৃত আত্নার গোরস্থান। ফলে সেখানে আবিষ্কার-উদ্ভাবন দূরে থাক, নিয়মিত পড়াশোনাটাই হয়না। অথচ দেশজুড়ে ছড়িয়ে থাকা এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোই হতে পারতো দেশের উন্নয়নের প্রধান হাতিয়ার, নিয়ে যেতে পারতো সাফল্যের চুড়ায়। 

বিশ্ববিদ্যালয় আর ইন্ডাস্ট্রির সাথে সম্পর্ক অপরিহার্য। ইন্ডাস্ট্রি স্মার্ট গ্র্যাজুয়েট চায় অথচ আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিনিয়োগ করতে যত অনাগ্রহ তাদের। বিশ্ববিদ্যালয়ে এই বিনিয়োগ সবার জন্য লাভজনক। গবেষণা বলছে, উচ্চশিক্ষা ও গবেষণায় প্রতি এক ইউরো বিনিয়োগে সরাসরি পাওয়া যায় ৯.৭ইউরো। পরোক্ষভাবে পাওয়ার যায় অতিরিক্ত ৩.৩৬ইউরো। তারা নিশ্চয়ই এটা জানেন না।            

এই বিশ্ববিদ্যালগুলোকে বাঁচাতে পারলে, বেঁচে যায় গোটা দেশ। লাখ কোটি টাকার মানি লন্ডারিং হয়, হাজার কোটি টাকা ব্যাংক থেকে উদাও হয়ে যায়, একেকটা পর্দা আর বালিশ লাখ টাকায় কেনা যায়, পুকুর খনন দেখতে গ্রুপে গ্রুপে বিদেশ সফর করতে যায়, কোটি টাকা ব্যায়ে গুলশানে মুভিং রোডের মতো অকাজের প্রোজেক্ট হাতে নেয়া যায়, কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়গুলো টাকা পায়না গবেষণা করার, বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য যাওয়ার। বিশ্ববিদ্যালগুলোকে ভোট ব্যাংক কিংবা নোংরা রাজনীতির উৎস না বানিয়ে তাদের আসল কাজ করতে দিন। উচ্চশিক্ষা আর গবেষণায় পর্যাপ্ত বরাদ্ধ দিন, মেধাবীদের দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করুন, লবিং কিংবা উচ্চ সিজিপিএ’র বদলে গবেষণা ও তার আম্ন দেখেই শিক্ষক নিয়োগ ও প্রমোশন দিন, দেখবেন দেশ বদলে যাচ্ছে। সেখানকার ছাত্রশিক্ষকেরা তখন আর গবেষনাপত্র চুরি করছেনা, আমেরিকা থেকে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপন করতে হচ্ছেনা, রাশিয়া থেকে লোক এনে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ বানাতে হচ্ছেনা, চীন থেকে প্রকৌশলী এনে পদ্মাব্রীজ বানাতে হচ্ছেনা। এমন নিজ হাতে গড়া স্বনির্ভর উন্নত দেশই নিশ্চয়ই জাতীর পিতার স্বপ্নে ছিলো।         

তথ্যসূত্রঃ   

[১] https://www.businessinsider.com/link-between-universities-in-a-country-and-gdp-2016-8

[২] https://mpra.ub.uni-muenchen.de/53900/1/MPRA_paper_53900.pdf

[৩] https://www.sciencedirect.com/science/article/pii/S0272775718300414

[৪] https://link.springer.com/article/10.1007/s10961-013-9320-0

[৫] https://theconversation.com/seven-ways-universities-benefit-society-81072

[৬ ] https://www.dhakatribune.com/bangladesh/education/2019/05/24/six-bangladeshi-universities-in-qs-asia-ranking

ফজলে হাসান আবেদ ও ব্র্যাক

৩১৬ পৃষ্ঠার গোটা বইটি একটা সুদীর্ঘ ইন্টারভিউ আর শেষে ইংরেজিতে কিছু বক্তব্যের সংকলন। লেখক গোলাম মোস্তফা আর স্যার ফজলে হাসান আবেদের মধ্যাকার কথোপকথনের মধ্যে এগিয়েছে বইটি। সেখানে মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী দেশ পুনঃগঠনের উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত ব্র্যাকের মহীরুহ হয়ে উঠার গল্প যেমন উঠে এসেছে, তেমনি উঠে এসেছে স্যার ফজলে হাসান আবেদের রাষ্ট্র ভাবনাও। বইটির প্রথম প্রকাশ যেহেতু ২০০৪ সালে, তাই সব আলোচনা ও তথ্য সেসময়ের প্রেক্ষিতে করা হয়েছে।

বইয়ের শুরুতে ব্র্যাকের জন্ম হওয়ার গল্প আলোচনা করার সময় স্যার ফজলে হাসান আবেদের মুক্তিযোদ্ধের সময়কার কিছু মতামত শুনে আমি অবাক হয়েছি। সেখানে তিনি স্পর্শকাতর কিছু বিষয়ে স্পষ্ট মন্তব্য করেছে। সেখানে তাজউদ্দীন সুযোগ না পাওয়ায় কি হলো, কি হতে পারতো, বঙ্গবন্ধু দেশে ফিরে আসার পর তার ভূমিকা কেমন হতে পারতো এসব আলোচিত হয়েছে। আলোচনার একজায়গায় তিনি বলেছেন “আমার ধারণা, শেখসাহেব যেকোনো কিছুর চাইতে বেশী গুরুত্ব দিয়েছিলেন তার প্রতি আনুগত্যকে। যে তার প্রতি বেশী অনুগত, তাকে তিনি নিজের লোক মনে করেছে। এ আনুগত্যটা চলে গিয়েছিল তোষামোদের পর্যায়ে। আর সে তোষামোদকারীদেরই শেখসাহেব কাছে টেনে নিয়েছে। তাদেরকে বড়কাজের দায়িত্ব দিয়েছেন। ঐ অনুগত ব্যক্তির অযোগ্যতা আর অসততাকে তিনি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করেন নি”     

১৫ আগস্ট সম্পর্কে আরেক জায়গায় তিনি বলেছেন “জাতি তার পিতাকে হারিয়েছে। স্বভাবতই বাংলাদেশের সমস্ত মানুষের বিক্ষোভে ফেটে পড়ার কথা। অথচ কিছুই হলো না। উল্টো শেখ মুজিবের কিছু লোক গিয়ে যোগ দিলো খন্দকার মোশতাকের মন্ত্রিসভায়”

তিনি আরও বলেছেন “যে কোনো সঙ্কটে জাতির বিবেক হিসেবে ভূমিকা পালন করতে পারতেন শেখ মুজিব। গান্ধী এটাই করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকেও আমাদের এই প্রত্যাশাই ছিলো। যদি আমাদের এই প্রত্যাশা পূরণ হতো তাহলে এতো বড় মাপের নেতাকে এতো অল্প সময়ের মধ্যে জনপ্রিয়তা হারাতে হতো না”

এরপর ধীরে কথা গড়ায় ক্ষুদ্রঋণ, ওরাল স্যালাইন, টিকাদান, যক্ষা নিরাময়, উপআনুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রম, আড়ং এবং এনজিও নিয়ে দেশের মানুষের ধারণা প্রসঙ্গেও। এই বইয়ের লেখক রাগঢাক রেখে খোলামেলা প্রশ্ন করেছেন। স্যার ফজলে হাসান আবেদও উত্তর দিয়েছেন একইভাবে।

ব্র্যাকের সমস্ত কার্যক্রমেই মহিলাদের প্রাধান্য দেখতে পাওয়া যায়। বইটি বিভিন্ন অংশে তার কারন বিভিন্নভাবে খুঁজে পাওয়া যাবে। একজায়গায় তিনি বলেছেন “পরিবারের যে কোন বিপর্যয়ে মহিলারা শেষ পর্যন্ত লড়াই করে বিপদ থেকে মুক্ত হওয়ার চেষ্টা করে। নিজে না খেয়ে বাচ্চাকে খাওয়ায়। কিন্তু একজন পুরুষ এই কাজটা করে না” – কথাটা আপাত অস্পষ্ট মনে হলেও এরকম নানান উদহারন আছে বইটিতে।

ব্র্যাক সবসময় চেয়েছে লোকাল রিসোর্সকে হার্নেস করতে, স্থানীয়দের ক্ষমতায়ন করতে। ব্র্যাক তাদের ভ্যাকসিন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য দেশব্যাপী প্যারাভেটেরিনারিয়ান গড়ে তুলেছিলেন। সেখানে দেখা গেলো ছেলে প্যারাভেটেরিনারিয়ানরা নিজেদের অনেক বড় ডাক্তার হয়েছে এমন ভেবে উল্টাপাল্ট এক্সপেরিমেন্ট করতে লাগলো। অন্যদিকে নারী প্যারাভেটেরিনারিয়ানরা যা শিখেছে তার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রেখেছিলো। তখন থেকে ব্র্যাক সিদ্ধান্ত নিলো এই প্রকল্পে কোন ছেলে নিয়োগ দেয়া হবে না।

একসময় যখন দেশের প্রত্যন্ত সব জায়গায় বিদ্যুৎ ছিলো না তখন ব্র্যাক তার টিকাদান কর্মসূচী চালাতে গিয়ে এক সমস্যায় পড়লেন। বিদ্যুৎ না থাকলে তো থারমোফ্লাক্স চালানো যাবে না। তাহলে টিকা সংরক্ষণ করবে কিভাবে? তাই তারা থানা সদরে ফ্রিজ থেকে ভ্যাকসিনের শিশি বের করে সেটা পাকা কলার ভেতর করে নিয়ে যেতেন প্রত্যন্ত গ্রামে।

ব্র্যাক সহ অন্য এমজিওগুলো সম্পর্কে সবারই একই অভিযোগ তাদের ক্ষুদ্রঋণের সুদহার নিয়ে। বলতেই পারেন, এনজিওরা তো অনুদান পায়, তবুও কেন তাদের সুদহার এতো উচ্চ? স্যার ফজলে হাসান আবেদ জবাব দিয়েছেন “ঋণের পরিমাণ পাঁচ হাজার টাকার কম হলে আমাদের লোকসান হয়। পাঁচ হাজার টাকার উপরে হলে কিছু উদ্বৃত্ত হয়। আমরা যদি শুধু ঋণকার্যক্রমকে শুধু লাভজনক করা জন্য উদগ্রীব থাকতাম তাহলে পাঁচ হাজার টাকার নীচে কোন ঋণ বিতরন করতাম না। অথচ আমাদের কাছে ঋণ গ্রহীতাদের মধ্যে শতকারা ৩৭ ভাগই পাঁচ হাজার টাকার কম ঋণ নিয়েছেন” তাছাড়াও আরেক জায়গায় উল্লেখ আছে যে, সাধারনত দুই শতাংশ ঋণ এমনিতেই ফেরত আসে না। সেখানে কোন অঞ্চলে প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলে তো আর কথাই নেই।        

আমার কাছে ব্র্যাকের সবচেয়ে দারুণ কাজগুলো একটি হলো খাবার স্যালাইন পৌঁছানোর কাজটা। চমৎকার একটা ব্যাপার শেয়ার করা যাক – স্যালাইন উদ্ভাবন হলো, দলবলকে প্রশিক্ষণ বাড়ি বাড়ি পাঠিয়ে মা’দের স্যালাইন বানানো শেখানো হলো, রান্নার পাত্রে আধা সের বরাবর স্থায়ী দাগ দেয়া হলো, কিন্তু তারপরও দেখা যাচ্ছে বাড়িতে খাবার স্যালাইন তৈরি করে শিশুদের খাওয়ানোর হার মাত্র ৬শতাংশ! কেন এমন হলো? শেষে একদল এন্থ্রোপলজিস্ট পাঠিয়ে উদ্ভাবন করা হলো এতো কম ব্যাবহার করার কারন। আমাদের নারীদের পরিবারে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা পোক্ত নয়। স্যালাইন বানানো শেখানো হয়েছিলো মায়েদের। তাই বাচ্চার ডায়রিয়া হলে যখনই মায়েরা হাতে বানানো স্যালাইন খাওয়াতে গেলো, বাবারা তখন বসলো বাঁধা দিয়ে। কি না কি খাওয়াচ্ছে। এটা বুঝার পর ব্র্যাক পরবর্তীতে বাবাদেরও এ কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা শুরু করলো। এবার দেখা গেল ঘরে তৈরি স্যালাইনের ব্যবহার ৬% থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮০% এর উপরে।

ব্রাকের একটা দর্শন হলো কর্মীদের সাফল্যের উপর ভিত্তি করে পারিশ্রমিক প্রদান করা। এতে নাকি ব্র্যাক অনেক কাজ দ্রুততা ও সফলতার সাথে করতে পেরেছেন। নানা সময়ে স্যার ফজলে হাসান আবেদের কাছে এমনটা শোনা গেছে। তাদের আরেকটা দর্শন হলো মানুষ ফ্রিতে দিলে সেটাকে কম গুরুত্ব দিয়ে দেখে। তাদের যক্ষা নিরাময় কর্মসূচীতে ব্র্যাক বিনামূল্যে ওষুধ বিতরনের পরিবর্তে দুশটাকা ফেরতযোগ্য জামানত নেয়া শুরু করলো। শর্ত হলো, সম্পূর্ণ কোর্স শেষ না করলে টাকা ফেরত পাওয়া যাবে না। এটাও বেশ কাজে দিয়েছে।

লেখক প্রশ্ন করেছিলেন, ব্র্যাক এতো দ্রুততা ও কার্যকারিতার সাথে যে কাজটা করছে, সরকার দেখা যাচ্ছে সেভাবে পারছেন না – কারন কি? স্যার ফজলে হাসান আবেদ জানিয়েছেন – কাজ হতে গেলে দুটি জিনিসের প্রয়োজন। একটি হলো সাধারণ মানুষের চাহিদা, প্রয়োজনবোধ, অধিকারবোধ ইত্যাদি, অন্যটি হলো ব্যবস্থাপনা। জানিয়েছেন দেশের বিশাল পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী এখনো শিক্ষাদিক্ষায় পিছিয়ে থাকার কারণে তারা নিজেদের দাবী তুলে ধরতে পারছেন না। দেশে শিক্ষার হার আশি-নব্বই শতাংশ হলে লোকজন সে সমস্যা ধীরে শীরে কাটিয়ে উঠতে পারবেন। তাছাড়াও মনিটরিংটাও বেশ জরুরী।

ব্র্যাকের সব কাজের মূলে আছে দারিদ্র বিমোচন। ব্র্যাক যখন দেখছিলেন ছেলেপেলেরা তখনো শিক্ষার বাইরে থেকে যাচ্ছিলো, সেখান থেকে ব্র্যাকের উপ আনুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রমের উৎপত্তি। স্যার ফজলে হাসান আবেদ বলেছেন শিক্ষায় বাচ্চাদের অনাগ্রহের একটা কারন অবশ্যই দারিদ্রতা। অন্যটা হলো শিক্ষায় আনন্দের ঘাটতি। ব্র্যাক তার শিক্ষা কার্যক্রমের কারিকুলামটা গড়ে তুলেছে খুব যত্ন নিয়ে। এই কারিক্যুলামে বিশ্বসেরা পদ্ধতি স্থান পেয়েছে। একটা জরিপ বলছে নেদারল্যান্ডে সবচেয়ে ভালো গণিত শেখানো হয়। জাপান বিজ্ঞান শেখায় সবচেয়ে ভালো উপায়ে। শিশুশিক্ষা সবচেয়ে ভালো ইতালিতে। নিউজিল্যান্ড সবচেয়ে ভালো শেখায় মাতৃভাষা। আমেরিকার পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিগ্রী আর সুইডেনের বয়স্ক নাগরিকদের শেখানোর পদ্ধতি সবচেয়ে ভালো। ব্র্যাক তাদের স্কুলগুলোতে যে পদ্ধতিতে শেখায় সেটা মূলত সমগ্র বিশ্বের সেরা পদ্ধতিগুলোর সম্মিলন।

স্যার ফজলে হাসান আবেদ মনে করেন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া উচিত স্থানীয় সরকারের হাতে। প্রশ্ন করেছেন এতোদূরে থেকে কর্তাব্যাক্তিরা কীভাবে এতোদূর থেকে অন্যের কাজ দেখাশোনা করবেন?

শুধু শিক্ষা নয়, দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্যও স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করা আবশ্যক বলে মনে করেন তিনি। সেটা সম্ভব না হলে প্রত্যাশিত উন্নয়ন হবে না। বইয়ে বলেছেন, স্থানীয় সরকারকে ক্ষমতায়ন করার প্রচেষ্টায় প্রধান বাঁধা হলো একগোষ্ঠি স্থানীয় সাংসদ। স্থানীয় সরকারের হাতে যদি পর্যাপ্ত ক্ষমতা থাকে তাহলে সাংসদদের স্থানীয় ইস্যুগুলো নাকগলানোর ক্ষমতা কমে যাবে। এই ভয়েই স্থানীয় সরকারের ক্ষমতায়নে সাংসদদের বিরোধীতা।             

গ্রামের মহিলারদের কর্মসংস্থান ও ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে বিদেশী উন্নয়ন সংস্থা ‘এমসিসি’ এর সহযোগিতায় ১৯৭৮ সালের প্রথম দিকে শুরু হয় আড়ং এর কার্যক্রম যা আয়েশা আবেদের হাত ধরে এগিয়ে চলে। অভিজ্ঞ বিদেশীদের এনে দেশী লোকদের ট্রেনিং নিয়ে দক্ষ করে তোলার পর তাদের দ্বারা চলতে থাকে আড়ং এর পথচলা। আড়ং এখন ডিজাইন এবং মান, দুটো দিক থেকেই প্রশ্নের উর্ধে। দেশের পাশাপাশি বিদেশেও আছে আড়ং এর আউটলেট। লোকজনের আড়ং নিয়ে অভিযোগ হলো, বিদেশী অনুদান থাকার পরও আড়ং এর পণ্যের মূল্য অনেক বেশী। আবার অভিযোগ আছে আড়ং এর শ্রমিকদের মজুরিও তুলনামূলক কম। তার জবাব হলো – আড়ং কখনোই শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরির কম দেয়নি। দাম কমাতে হলে মজুরী কমিয়ে দিতে হবে। “একজন দরিদ্র মানুষকে কম মজুরী দিয়ে মধ্যবিত্তের সুবিধা করে দিতে হবে এমন চিন্তা আমাদের কখনো মাথায় ছিলো না, এখনো নাই” বলেছেন স্যার ফজলে হাসান আবেদ। স্পষ্ট হওয়ার জন্য তিনি আরও বলেছেন “আড়ংয়ে যে পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করেছি, সে পরিমাণ অর্থ ব্যাংকে রাখলে যে লাভ আসত, বছরশেষে হিসাব করলে দেখা যায়, আড়ং থেকে সে পরিমাণ লভ্যাংশই আমরা পাই। সুতরাং আড়ং বেশী লাভ করছে না। প্রথম চারবছর আড়ং কিন্তু লোকসান দিয়েছে”

একথা কথা উল্লেখ না করলেই নয়। আড়ং এর শাখা বাড়ানোর ব্যাপারে স্যার ফজলে হাসান আবেদ মনে করেন প্রথমে যে শাখাগুলো আছে সেগুলোর সঠিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে। তারপর শাখা বাড়ানোর চিন্তা করতে হবে।

এনজিওকর্মী ও পরিচালকদের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা, কারিতাস, ওয়ার্ল্ড ভিশনের বিরুদ্ধে ধর্মান্তরকরণের যে অভিযোগ সেসব নিয়েও কথা হয়েছে এই বইয়ে। এডাব এর অকার্যকর হয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন “যখন কোন সংগঠন সমস্যায় পড়ে, তখন নেতৃত্বের মধ্যে ত্যাগ স্বীকারের মনোভাব থাকা প্রয়োজন” এনজিওদের নিয়ন্ত্রনে আইন নিয়েও কথা এসেছে এখানে।

ব্র্যাক তো এনজিও, তারা কেন ব্যবসা করবে? এমন প্রশ্নের জবাবে বেশ কিছু উদাহারন দিয়েছেন। তিনি বলেন হার্ভার্ড অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হওয়ার পরও তাদের ১৭ বিলিয়ন ডলারের সম্পদ আছে। সম্পদ আছে ক্যাম্ব্রিজেরও। অক্সফামের ৭০০ দোকান আছে গোটা বিশ্বে। মার্কিন জিডিপির ৮% আছে এনজিও থেকে। আমাদের ভূল ধারণা হলো, আমরা মনে করি অলাভজনক মানে কোন ব্যবসা করা যাবে না। ব্যবসা করা যাবে, তবে লাভগুলো বন্টন না করে সামাজিক কাজের প্রসারে পুঃবিনিয়োগ করতে হয়।

একভাবে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের টিউশন ফি নিয়েও আলোচনা হয়েছে। মান সম্পন্ন শিক্ষা দিতে যে পরিমাণ খরচ সেটা পূরণ করতে গেলে অল্পটাকা নিয়ে টিকে থাকা যাবে না। তবে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় কিছু ছাত্রছাত্রীদের জন্য বিনামূল্যে পড়ানোর জন্য তহবিল গঠনের কাজ করছে। ব্র্যাক চায় এই বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে তুলতে, যারা দেশের দারিদ্র বিমোচনে জন্য সক্রিয়ভাবে কাজ করবে। এটা মেধাবীদের মানসম্পন্ন শিক্ষা দিয়ে দেশে ধরে রাখার একটা চেষ্টাও বটে।

ব্র্যাক কীভাবে বাংলাদেশে কাজের অভিজ্ঞতা অন্যদেশে কাজে কাজে লাগিয়ে সেসব দেশে রাষ্ট্রীয়ভাবে সুনাম অর্জন করছে সেসব উঠে এসেছে।        

Image result for ফজলে হাসান আবেদ ও ব্র্যাক বই

বই পড়ার পুরোটা সময় জুড়ে যেভাবে সমস্যা নির্বাচন ও সমাধানের কথা আলোচিত হয়েছে, তাতে আমার মনে হয়েছে ব্র্যাক অত্যন্ত বাংলাদেশী একটা প্রতিষ্ঠান, বাংলাদেশের মানুষের প্রতিষ্ঠান। এর সমস্যাগুলো যেমন মানুষের নিজেদের সমস্যা, তেমনি সমাধানগুলোও অত্যন্ত সহজ-সরল। সমাধানগুলো এসেছে মাঠ থেকেই। তার ফলে যেটা হয়েছে, ব্র্যাকের দেয়া সুবিধাগুলো ভোগ করতে দেশের প্রান্তিক মানুষের অসুবিধা হয়নি।       

এতো অসাধারণ একটা মানুষ, অসাধারণ একটা প্রতিষ্ঠান যেভাবে দেশ-বিদেশকে বদলে দিচ্ছে তা দিয়ে একটা সিনেমা বানালে মন্দ হয় না। নাকি?

মাওলা ব্রাদার্স থেকে প্রকাশিত বইটির প্রথম প্রকাশ ২০০৬ সালে। প্রচ্ছদ করেছেন কাইয়ুম চৌধুরী। গায়ের মূল্য ৬৫০টাক। তবে বইমেলা উপলক্ষ্যে ২৫% ছাড় ও বিকাশে পেমেন্ট করলে অতিরিক্ত ১০% ক্যাশব্যাক পাওয়া যাবে। পাওয়া যাবে রকমারি তেও। হ্যাপি রিডিং।