ন্যানোর দুনিয়া

এই পৃথিবীর সৃষ্টিলগ্ন থেকে মানুষ তার দৈনন্দিনগুলোকে সহজ থেকে সহজতর করার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের এই অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল আজকের এই আধুনিক যুগ। তাদের এই অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলেই প্রযুক্তি আজ আরোহন করছে সমৃদ্ধির শিখড়ে। প্রযুক্তির এই উৎকর্ষের যুগে মানুষ প্রতিনিয়ত’ই পাচ্ছে একেকটি নতুন মাত্রা, নতুন স্বাদ।

অবাক করার মতো বিষয়টি হলো প্রযুক্তি যতই অগ্রসর হচ্ছে বিস্ময়কর ভাবে যন্ত্র গুলোও যেন তালে তাল মিলিয়ে ছোট হতে শুরু করেছে ।হ্যাঁ, তাই! কিন্তু কেন? ওইযে বললাম, সহজ করার জন্য…..! নইলে একবার ভেবেই দেখোনা, আজকের এই  মোবাইল ফোনটি যদি হতো টেলিভিশনের সাইজের, তাহলে কেমন হতো? কিভাবে তুমি সেটাকে হাতে হাতে নিয়ে ঘুরতে? তখন শুধু মোবাইল ফোন বহনের জন্যই আলাদা একটা লোক নিয়োগ দেয়া লাগতো। আর যে প্রযুক্তির কল্যাণে মানুষ এমন বিব্রতকর অবস্থা থেকে রেহাই পাচ্ছে সেটি হলো ন্যানো ট্যাকনোলজি ।

এবার জানা যাক ন্যানো কাহিনী । কি এই ন্যানো ? কিভাবে এলো ? দাঁড়াও……বলছি। ন্যানো শব্দটি  এসেছে গ্রীক শব্দ ন্যানোস থেকে। যার বাংলা অর্থ “বামন” । পরিমাপের সবচেয়ে  ক্ষুদ্র একক ন্যানোকে যদি মাপের দৃষ্টিতে দেখা হয় তাহলে ১মিটারের ১০০কোটি  ভাগের ১ভাগ !আশ্চর্য হবার কিছু নেই। আমার কথা যদি অবিশ্বাস্য মনে হয় তবে একবার গুগল করে দেখতে পারো।

ন্যানোর আগে যে যুগটি ছিলো সেটি হল মাইক্রো যুগ । ১৯৫৯ সালে নোবেল জয়ী বিজ্ঞানি রিচারড ফাইনম্যান প্রথমবারের মতো ন্যানোর ধারনা দেন । এবং ১৯৮৯ সালে মানুষ ন্যানোর বাস্তবায়ন মানুষ দেখতে পায় ক্যালিফোর্নিয়ার  IBM গবেষণাগারে । সেদিন’ই মানুষ প্রথমবারের মতো মনের মতো করে অণুকে সাজিয়ে যন্ত্র বানাতে পেরেছিলো !

আজকাল প্রতিনিয়ত বাড়ছে  ন্যানো ট্যাকনোলজির ব্যবহার। LCDমনিটর, কম্পিউটারের মাইক্রোপ্রসেসর, ক্যাপাসিটর, খেলোয়াড়দের সান স্ক্রিন, আনুবীক্ষনিক রোবট, ন্যনো ফাইবার সহ আরো বহুত কিছু! তার মধ্যে শেষ দুটোর কথা না বললেই নয়। এদের ব্যাবহারটাও বলে দেই না!

শোন, আনুবীক্ষনিক রোবটের কাজ হলো রক্তের সাথে মিশে গিয়ে ক্ষতিকর জীবাণু চিহ্নিত করে তাকে ধ্বংস করা। কি? অবাক হলে? অবাক হওয়ার কিছু নেই। সামনে যে আরো কত কিছু দেখতে হবে…!

আর, ন্যানো ফাইবার হল কারবন পরমাণুর তৈরী একধরনের টিউব যার ব্যাস কয়েক  কিন্তু দীর্ঘে মিটার থেকে শুরু করে কয়েক কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে। এই অতি সুক্ষ দিয়ে যদি কোন দড়ি প্রস্তুত করা হয় তবে তা হবে ইস্পাতের চেয়ে ছয় গুন শক্ত কিন্তু ওজনে তার ছয় ভাগের এক ভাগ! এবার বোধহয় অজ্ঞান’ই হয়ে গেলে! তাই না?

এর কিন্তু অপকারিতাটও আছে। এর মধ্যে সম্ভাব্য ও একই সাথে মজার(বিপদ আবার মজার হয় কিভাবে?) একটি অপকারিতা হল যদি কোন কারনে এরা মানুষের নিয়ন্ত্রনের বাহিরে চলে গিয়ে নিজেরাই নিজেদের তৈরি করে গোটা পৃথিবীটাকে ছেয়ে ফেলে? তখন নিশ্চিত ধ্বংসের মুখে পড়বে মানব অস্তিত্ব! যদিও বিজ্ঞানীরা এই সম্ভাবনাটাকে অনেকটা অবাস্তবই মনে করছেন। ভয় পাওয়ার কিছু নেই! এইটা নিছক একটা কল্পনা।

বিজ্ঞানীরা প্রতিনিয়তই এটাকে আরো উন্নত পর্যায়ে নেয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন। দেখা যাক…কি হয়?

আঠারো বছর বয়স

১৮ বছর বয়স… এই তো মাত্র সে দিন আব্বু-আম্মুর সাথে ঘুমোতাম। আম্মু-আম্মু বলে কান্না করতাম। ক্লাসে হাফপ্যান্ট পরে যেতাম। মেয়েদের সাথে একবেঞ্চে বসতাম। আরও কতো স্মৃতি…। আর এখন? আব্বু-আম্মুর সাথে ঘুমাই না। আম্মু-আম্মু বলে কান্না করি না। হাফপ্যান্ট পরে ক্লাসে যাই না। ক্লাসে মেয়েদের সাথে একবেঞ্চে বসি না। অর্থাৎ সম্পূর্ণ বিপরীত। বয়স যতো বাড়তে থাকবে, শৈশবের সাথে দূরত্বও ততো বাড়তে থাকবে। এখনকার যেসব স্মৃতিগুলো তখন হয়তো হারিয়ে যাবে। নতুন স্মৃতি যুক্ত হবে ঝুড়িতে। এটাই নিয়ম। এই যে ১৮ বছর পার করে দিলাম, তার মধ্যে কতো কিছু হয়ে গেলো। প্রাপ্তি আর অপ্রাপ্তির তালিকাটা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হতে লাগলো। কতো কিছু করেছি এই ১৮ বছরে। যখন ক্লাস ফোরে ছিলাম, বাবা থেকে দেখে ডাইরি লিখা শুরু করি। সিক্সে গ্রাম থেকে শহরে চলে আসা এবং কলেজিয়েটে ভর্তি হওয়া। ধীরে ধীরে পরিচয় ঘটে আশ্চর্য এক জিনিসের সাথে। ইন্টারনেট। তারপর সেখান থেকে শুরু হয় ব্লগিং। শুরু হয় নিয়মিত পত্রিকা পড়া, বই পড়া। সত্যি কথা বলতে কি, আমার প্রায় ভালো গুণ গুলো আমি বাবা থেকেই পেয়েছি। তারপর চিন্তা চেতনার পরিধিটা বড়ো হতে শুরু করে। কাজ শুরু করি reflectiveTEENS এর। হঠাৎ সুযোগ পেয়ে যাই পত্রিকায় লেখার। গ্রাম থেকে শরে আসার ফলে আমার যে ব্যাপারটা উপলব্ধ হয় সেটা হলো ‘গ্রাম আর শরের মানুষের জীবন মানের পার্থক্য।’ সেখান থেকে শুরু করি reflectiveTEENS Foundation। সায়েন্স ফেয়ার, ডিবেট, এক্সটেম্পর স্পীচ, স্কাউট, ভলান্টিয়ারিং সহ আরও কতো কি। সবকিছুর মাধ্যমে যেটা হয়েছে, সেটা হলো ‘অনেকগুলো মানুষের পরিচয়’। এই যা কিছু করেছি, ঠিক কতো সংখ্যক মানুষের অবদানে আর সাহায্যে এতোদূর আসা তা বলা মুশকিল। ১৮ বছরের এই জীবনে যা কিছু করেছি, তার থেকে ‘ঠিক চারটি’ বিষয় আপনাদের সাথে ভাগাভাগি করা প্রয়োজন বলে আমার মনে হয়েছে।

  • স্বপ্ন দেখা না থামানোঃ

স্বপ্ন খুব আপেক্ষিক একটা ব্যাপার। স্বপ্ন আজ একরকম তো আগামিকাল অন্যরকম। যখন ছোট ছিলাম, স্বপ্ন ছিলো পাইলট হয়ে বিমান চালাবো। আবার কখনো স্বপ্ন ছিলো আর্মি হয়ে যুদ্ধ করবো। যখন আরও বড়ো হই, স্বপ্ন ছিলো বিজ্ঞানী হবো। দুই-তিনটে নোবেল পাবো। এভাবে জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে ঘটে অদ্ভূত স্বপ্নের পরিবর্তন। স্বপ্নের কারণেই আমার এই পর্যন্ত আসা। স্বপ্ন মানুষকে সাহসী করে। ধৈর্যশীল করে। অনেক কিছু জানতে সাহায্য করে। তাই স্বপ্ন দেখা থামানো যাবে না।

  • নিজের উপর বিশ্বাস রাখাঃ

চলার পথে বিভিন্নজন বিভিন্ন কিছু বলবে। সেটাই স্বাভাবিক। তবে সিদ্ধান্ত নিবেন আপনিই। সবার কথাই মনোযোগ দিয়ে শুনেছি। তবে আমার যেটা গ্রহন করা উচিত বলে মনে হয়েছে সেটাই গ্রহণ করেছি, সে কাজটাই করেছি এবং শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করেছি।

  • ধৈর্য ধরাঃ

ব্যাপারটাতে আমি অনেএএএএক কাঁচা। চেষ্টা করেছি কোন ব্যাপারে ধৈর্য ধরার। তবে অধিকাংশেই আমি ব্যর্থ হয়েছি। তবে যে কয়বার ব্যপারটাতে সফল হয়েছি (মানে, ধৈর্য ধরে কিছু একটা করতে পেরেছি) ততবারই আমি খুব ভালো কিছু ফলাফল পেয়েছি। আর সেসব ভালো ফলাফলই আমাকে ধৈর্যের গুরুত্ব বাড়িয়েছে। চেষ্টা করে যাচ্ছি…।

  • সফলতাকে উদযাপন করাঃ

 

ছোট-বড় সব সফলতাকেই আমি উদযাপন করেছি। গভীর থেকে অনুভবের চেষ্টা করেছি। কিভাবে এলো সেটা চুলচেরা বিশ্লেষণ করেছি। কেনো এলো? কি কি কারনে না আসতে পারতো? যদি না আসতো? কিভাবে আরও ভালো করা যেতো? এসব প্রশ্ন আমি নিজেকে করি। এটা আপনাকে একদিকে যেমন অন্যান্য কাজে উৎসাহ যোগাবে, একইভাবে পরবর্তী ভূল থেকে বাঁচতেও সাহায্য করবে।