নানাবাড়ি, আমার হল (ডর্ম) জীবন আর আমি

Yusuf's Diary

নানাবাড়ি, আমার হল (ডর্ম) জীবন আর আমি

অনেদিন লেখা হয় না। আজ শুক্রবার। ঘুম থেকে উঠতে একটু দেরি হয়েছে। ঠিক দেরি হয়েছে বললে ভুল হবে। বরং বলি দেরি করেছি। কাল রাতে হঠাত কালবৈশাখী ঝড় হলো। এই এক ঝড়ে কতো কি হয়ে গেলো। অনেক অনেক দিন পর ভার্সিটির হলে বিদ্যুৎ চলে গেলো। পুরো হলের সব ছেলে পেলে তাই উদযাপন করতে রুম থেকে বেরিয়ে পড়ল। সবাই কমন করিডোরে এসে সজোরে চিল্লাতে লাগলো – শাহিইইইন… ধরে ফেল, ধরে ফেল। আধোঘুমে ছিলাম আমি। তাদের চিল্লাচিল্লিতে আমার ঘুম গেলো উবে। বুঝার চেষ্টা করলাম তারা কি চায়। বুঝতে পারিনি। পরে সকালে নাশতা খেতে যাওয়ার পথে এক বন্ধুর সাথে গল্প করছিলাম। সে জানালো এই ঘটনা নাকি নিয়মিত হয়। যখনই বিদ্যুৎ যায়, ছেলেপেলেরা কিছু একটা নিয়ে চিল্লাতে চিল্লাতে আকাশ আর ছাঁদ এক করে ফেলে। ওহ, বলা হয়নি, আমি হলে নতুন উঠেছি। তাই রীতিনীতি জানিনা ওতোটা। অনেকদিন হলরোডের একটা বাসায় থাকতাম একা। তাও থাকতাম জোর করে। একা থাকলে চিন্তা ভালো করা যায়। মনোযোগ দিয়ে কাজ করা যায়। কিন্তু শেষদিকে এসে মনে হলো, থাক, আর কয়দিনই বা আছি ভার্সিটিতে। যাই, একটু হলে থেকে আসি। ভিন্নকিছু উপভোগ করি। এভাবেই আমার হলে উঠা।

সকালে নাশতা যাওয়ার পথে নীচ তলায় এক বন্ধুর রুমে ঢু মারতে গেলাম। উদ্দেশ্য তাকে সাথে নিয়ে যাবো নাশতা করতে। তার রুমের পেছনের বারান্দায় গিয়ে দেখি এক পিচ্চি গাছ থেকে বরই পাড়ার চেষ্টা করছে। বেচারা নাগাল পাচ্ছে না। বারান্দাটা একটু উঁচু। আমি একটা ডাল টেনে তার হাতে ধরিয়ে দিতে যাবো, তখনই সে নিজেই আরেকটা ডাল ধরে দিলো টান। কিছু বুঝে উঠার আগেই দেখি হাতে প্রচন্ড ব্যথা অনুভব করলাম। একটা কাঁটা ঢুকে গেছে হাতে। বেচারা ছোটো মানুষ বুঝতে পারেনি এমন হবে। আমি চলে এলাম।

হলের রাস্তাটার সামনে একটা আম গাছ আছে। বেশকিছুদিন ধরে নজর রাখছিলাম। প্রমান সাইজের হলেই হানা দিবো। এ জায়গায় একটা কথা বলে দিই – হলকে কেনো জানি আমার নানার বাড়ির মতোই মনে হয়। আম্মুর জন্ম একটা বাড়িতে ঠিক আছে, কিন্তু আশেপাশের সব বাড়িকেই আমরা নানাবাড়ি ধরে নিই। ধরে নেয়ার কারন প্রত্যেকের আতিথেয়তা। আমরা গেলে তারা এমন ভাবে করে, নিজের আপন নানাবাড়ি না ভেবে উপায় নেই। যাহোক, নানার বাড়ি গেলে দেখা যেতো চারদিকে অনেক গাছে। কোনো না কোনো গাছে কিছু না কিছু একটা ধরেছে। হয় নারকেল, নাহয় পেয়ারা, নাহয় বাতাবী লেবু আর নাহয় বরই। কাজিনরা দলেবলে যেতাম, দেখতাম, পছন্দ হলে খেয়ে ফেলতাম। কোথাও বলার মতো কেউ নেই। সবই আমাদের ইচ্ছা। হলের পরিবেশও একদম তাই। চারদিকে অনেক ফলমূলের গাছ। কোনো গাছে কাঠাল, কোনো গাছে পেয়ারা, কোনো গাছে গাব, ডাব, বা অন্যকিছু। যে যখন যেভাবে চায়, খেতে পারে। কেউ কিছু বলবে না।  

নাশতা করে ফেরার পথে আম গাছে চোখ পড়তেই দেখলাম আমটা প্রমান সাইজের হয়ে গেছে। অন্যকারো নজরে পড়ার আগেই পেড়ে নিয়ে উদরে চালান করে দেয়াটাকে যথার্থ মনে করলাম। যেই ভাবা সেই কাজ। রুমে এসে লবন দিয়ে আমটা খেতে খেতে ভাবছি, একটাই তো জীবন। টুপ করে কোনো একদিন মরে গেলেই তো সব শেষ। কি দরকার এতো চিন্তাভাবনার? কি দরকার এতো প্যাঁচাল করার? আহা, জীবনটা সুন্দর।        

Please follow and like us:
error0
fb-share-icon0
fb-share-icon20
Yusuf Munna is a Bangladeshi Social Entrepreneur, Writer and Activist. He is currently serving as the founder and CEO at Reflective Teens, an internationally recognized teen based creative platform working to expose, incite and incubate the creativity of teenagers. Yusuf frequently writes for different national English dailies including Dhaka Tribune and The Business Standard.
Back To Top