কালো মেঘ সরে যাবে

Yusuf's Diary

কালো মেঘ সরে যাবে

একটা সময় ছিলো যখন মনে হতো আমাদের প্রজন্ম বোধহয় দেশটা ভালোই চালাতে পারবে। তাদের হাত ধরে আসবে পরিবর্তন। কিন্তু সেচিন্তায় নির্ভার থাকা আর হলো কোথায়? এই সময়ের তথাকথিত টিকটক সেলিব্রিটি অপু বাঁ মামুনের দিকে তাকালে আমার সব আশা ভেঁপুরের মতো উধাও হয়ে যায়। তাদের তৈরি করা কনটেন্ট নিয়ে সবার মাথায় হাত। সবার মনে অপু-মামুনের বিকৃত রুচি নিয়ে প্রশ্ন জাগে। কিন্তু হায়, নিজের রুচিবোধের দিকে একবার তাকানোর সময়ও হলো না। মানলাম, তাদের কনটেন্ট এর মান খুবই নিচু। তাই যদি হয়, তাহলে মানতেই হবে, আপনার আপনার-আমার রুচিবোধও কোন অংশে কম নিচু নয়। আমরাই তাদের ভিডিও দেখি, লাইক দিই বা শেয়ার করি। আমরাই তাদের সেলিব্রিটি বানিয়েছি। সেই আমরাই কিনা আবার অপু-মামুনদের কনটেন্ট নিয়ে নাক শিটকাই। দেখুন কান্ড!

গতো মাস-পাচেক ধরে সবাই ঘরে বসে আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদেরও তাই অবস্থা। ওদিকে ক্লাসও হয়-হয়না অবস্থা। ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ সীমিত। এই সুযোগে সবাই আচ্ছামতো ঘুমাচ্ছে আর মুভি-নাটক দেখছে। সময়টাকে কাজে লাগানোর চিন্তা আছে কজনের? সারাদিন টইটই করে কাটিয়ে দেয়া এক বন্ধুকে প্রশ্ন করেছিলাম। তার উত্তর শুনে আমি অবাক হয়নি। বলেছে সবার যা হওয়ার তাই হবে। একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রের কাছে এমন উত্তর সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত। অবসরে নিজেকে প্রডাক্টিভ কাজে যুক্ত করা বা নতুন কিছু শেখার মানসিকতা তার নেই। সে যে ‘সবার যা হওয়ার তাই হবে’ বলে বসে আছে, করোনা পরবর্তী সময়টা কেমন হবে সে চিন্তা উদয় হওয়ার ক্ষমতাটুকুও তার নেই।

এখন প্রশ্ন আসতেই পারে, কেন এমন হচ্ছে? দায়ের অর্ধেকটা সমাজের, বাকিটা শিক্ষাগত অবকাঠামোর। হোক অপু-মামুন অথবা আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধু, দুইজনের সামনেই কোন এপ্রোপিয়েট আইডল নেই। তারা সবাই সস্থা নাটক বা হিরো আলমের ভিডিও দেখে এই পর্যায়ে এসেছে। সমাজ তাদের বুঝাতে পারেনি। বিশ্ববিদ্যালয়ও সেটা করতে ব্যর্থ হয়েছে। অপু-মামুনকে যদি জিজ্ঞেস করা হয় নাভিদ মাহবুব কে অথবা উন্নয়ন অধ্যনে পড়া বন্ধুকে যদি জানতে চাওয়া হয় আহমেদ মুশফিক মোবারক কে তাহলে তাদের হা করে তাকিয়ে থাকা ছাড়া উপায় থাকবেনা। আমাদের সমাজ যদি এসব মানুষদের সঠিকভাবে তুলে ধরতে পারতো, অথবা বিশ্ববিদ্যালয় যদি পারতো বোধ শক্তি জাগাতে, তাহলে পরস্থিতিটা অন্যরকম হলেও হতে পারতো। এসব ভালো কনটেন্ট বা ভালো মানুষকে যেমন যথাযতভাবে তুলে ধরা জরুরী, অন্যদিকে সমান জরুরী তেমন কিছুকে গ্রহণ করার রুচি। এসব মানুষগুলোকে আপনি দেখবেন অনুসরন করবেন, তাদের কাজ সম্পর্কে জানবেন, এভাবে একদিন নিজের মধ্যে কৌতূহল তৈরি হবে, আপনি ধীরে ধীরে তাদের পর্যায়ে চিন্তা করতে শিখবেন – এভাবেই পরিবর্তন আসবে।

বস্তা পচা জিনিস খাবেন, আর পেট খারাপ হলে দুশ্চিন্তা করবেন, তা তো হবেনা! প্লিজ, অপু-মামুনের ভিডিও শেয়ার না দিয়ে কাজের কিছু শেয়ার করুন। ফান্ড রেইজার, নাভিদ মাহবুবের শ্যো বা অভিজিৎ ব্যানারজির কাজ নিয়ে ডকুমেন্টারি, যেকোন কিছু। তবুও অপু-মামুনের ভিডিও না! ভালো কাজ সম্পর্কে সবাই জানবে, সহযোগীতা করতে পারবে। ওদিকে নিম্নমানের কনটেন্টও জায়গা না পেয়ে উধাও হয়ে যাবে। সবার সবদিকে লাভ।

নিশ্চয় সুদিন আসবে। সূর্যের সামনে থেকে কালো মেঘ সরে যাবে। সেদিন সমাজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় তার দায়িত্ব যথাযথ পালন করবে। পরিবেশটা বদলে যাবে। সে পরিবেশে অপু-মামুন সহ আমাদের সবার রুচিবোধ জাগ্রত হবে, আমার বন্ধু ভাবতে শিখবে, নির্ভীক কৌতূহলী হবে। সে দিনের প্রত্যাশায়।            

Please follow and like us:
error0
fb-share-icon0
fb-share-icon20
Yusuf Munna is a Bangladeshi Social Entrepreneur, Writer and Activist. He is currently serving as the founder and CEO at Reflective Teens, an internationally recognized teen based creative platform working to expose, incite and incubate the creativity of teenagers. Yusuf frequently writes for different national English dailies including Dhaka Tribune and The Business Standard.
Back To Top