কলকাতায় ফেরার পথে

Yusuf's DiaryLeave a Comment on কলকাতায় ফেরার পথে

কলকাতায় ফেরার পথে

সুদীপ্ত। আমার বন্ধু। বেশ গোবেচারা টাইপ ছেলে বলতে পারেন। ঠিক ৭টা ৫মিনিটের ট্রেন। আনন্দ বিহার থেকে ছাড়বে। যাচ্ছি হাওড়া। অল্প কিছুতেই অনেক বেশী ভয় পেয়ে যায়, অনেক বেশী চিন্তায় পড়ে যায় – এই হলো তার স্বভাব। থাকছি দোয়ারকা; কাকার বাসায়। ট্রেন যাতে কোনভাবেই মিস না হয় তার জন্যেই যতো তোরজোড়। ভোর সাড়ে চারটায় এলারম সেট করে, ন ডিগ্রী তাপ থেকে রক্ষে পেতে, গায়ের উপর দুদুটো লেপ চাপিয়ে ঘুম দিলাম ঠিক রাত দশটায়।

এলারম বাজার সাথে সাথেই সুদীপ্তের চেঁচামেচিতে আমার ঘুম ভাঙলো। মুখহাত ধুয়ে কাকির দেয়া বড় একপ্যাকেট নাস্তা সম্বল করে বেরিয়ে পড়লাম। যখন বেরুচ্ছি, সময় তখন ভোর পাঁচটা। আমি ভেবেছিলাম এতো ভোঁরে রাস্তা নিশ্চই ফাঁকা। রাস্তায় নেমে দেখলাম গোটা চিত্রটাই ভিন্ন। গাড়ি, গাড়ি আর গাড়ি। দিল্লির রাস্তা এখনো পুরোটাই জীবন্ত। আমি বোকা। মানছি দিল্লির মতোন এক শহরে এমন ফাঁকা রাস্তা আশা করাটা ঠিক হয়নি। তাই বলে এতোটা যে বোকা সেটা কিন্তু আগে বুঝিনি। আমরা উবারে চেপেছি। আশপাশ দিয়ে অনেক গাড়ি যাচ্ছে। অনেকগুলো মোটরসাইকেলও দেখা যাচ্ছে। সবগুলোতেই সামনে একটা ছেলে আর পেছনে একটা মেয়ে। দুটো ব্যাপার। এক – আমরা যেহেতু ষ্টেশনের রাস্তা ধরে যাচ্ছি তাই এটাতে এসময়ে অনেক গাড়ি থাকতেই পারে। দুই – এখানে রাত দশটা থেকে ভোর পাঁচটা পর্যন্ত ক্লাব-বারগুলো খোলা থাকে। হয়তো সারারাত আনন্দ করার পর ছেলেরা মেয়েগুলোকে ড্রপ করে দিতে যাচ্ছে।

সে যাই হোক। ট্রেনে উঠেছি। স্লিপার ক্লাস। বগি খুঁজে পেতে সমস্যা হলোনা। ভুলোমনা বলে জুতা আর ব্যাগ একসাথেই রাখলাম। এটলিস্ট জুতো ছাড়া তো ট্রেন থেকে নেমে পড়বোনা। আর জুতো নিতে গেলেই ব্যাগটা চোখে পড়বে। এই হলো আমার লজিক। পাশের সীটে বসেছে ওয়েস্ট বেঙ্গলের এক ছোট পরিবার। বাবা, মা আর ছোট্ট একটা মেয়ে। এসেছিও ট্রেনে। গতো সপ্তাহের পুরোটাই প্রোগ্রাম আর ঘুরাঘুরি নিয়ে এতোটাই ব্যস্ত ছিলাম যে, ভারতীয় ট্রেনে লম্বা ভ্রমনের ব্যাসিক কিছু প্রস্তুতি নিতে ভূলে গিয়েছি। যার মাশুল এখন দিতে শুরু করছি। জানালার সাটার কোন এক অদ্ভূত কারনে পুরোটাই বন্ধ করা যাচ্ছে না। ট্রেন যতো তেজ পাচ্ছে, ততোই হাওয়া হুড়হুড় করে ঢুকছে। সবাই মোটা কাথাকম্বল নিয়ে এসছে এখানে। তাই তাদের কোন সমস্যা নেই। যতো সমস্যা আমাদেরই। ব্যাগ থেকে কোট আর লুঙ্গিটা বের করে ম্যনেজ করার ব্যর্থ চেষ্টা করেই চলেছি। মাথার নীচে ব্যাগ, গা আর মুখের উপর কোট এবং পায়ের উপর লুঙ্গিটা – এই হলো আমার ব্যর্থ চেষ্টার বর্ণনা। মোটেও ভূল ধারণা করার কারন নেই। আমি জামাকাপড় পড়েই উঠেছি। সে জামাকাপড়ের উপরেই আবার এসব। তবুও কাজ হচ্ছে না।

ঘুমোতে না পেরে ব্যগ থেকে ল্যাপটপটা বের করলাম। অল্পঅল্প ভয় করছে। ঝাপ্টা পার্টির ভয়। কোন সময় কেড়ে নিয়ে চলে যায়। তখন আমার কিছু বলার থাকবেনা।

পাশের ওই ওয়েস্ট বেঙ্গলের মহিলা আমার মায়ের বয়েসি। উনারা দুটো কম্বল নিয়ে এসেছেন। আমাদের দেখে উনার ভালোবাসার উদয় হলো। কিন্তু সমস্যা হলো স্লিপার ক্লাস। স্বামীস্ত্রী দুজন উপর-নীচে দুই বিছানায়। বাচ্চাটা মায়ের সাথে নীচেরটায়।

আমি যতক্ষণে এটাওটা করছি, ততক্ষনে তার ঘুম থেকে উঠে গেছে। শুধু ছোট্ট মেয়েটা উঠেনি। ট্রেনে উঠার পর ওই মহিলার সাথে আমাদের অল্প কথা হয়েছিল। তাই এখন কথা বলতে আর বেগ পেতে হলো না। মেয়েরা একটু ওই রকমই। খুব আবেগ তাদের। বললো – “বাবা, আনোনি কিছু?” “খুব ঠান্ডা লাগছে না?” “কিনোনি কেনো?” এরকম অনেক প্রশ্ন। শেষে বললো – “বাবা, আমার মেয়েটা উঠুক। তারপর কম্বলটা আমি তোমাদের দিবো। ঘুমিয়ে নিও একটু।”

 

 

 

Please follow and like us:
error0
fb-share-icon0
fb-share-icon20
Yusuf Munna is a Bangladeshi Social Entrepreneur, Writer and Activist. He is currently serving as the founder and CEO at Reflective Teens, an internationally recognized teen based creative platform working to expose, incite and incubate the creativity of teenagers. Yusuf frequently writes for different national English dailies including Dhaka Tribune and The Business Standard.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back To Top