আমার লেখালেখি, আমার বই পড়া

পিয়ানো সুর আমার কাছে খুব মোহনীয় মনে হয়। লিখতে বসার আগে ফোনে পিয়ানোর আলতো সুর বাজিয়ে দিই। বেশ ভালোই লাগে। মনে হয় লিখায় গতি পেলো। অনেকদিন ধরে লিখবো লিখবো ভেবে কীবোর্ড সামনে নিয়ে বসেছি। উঁহু, কোনভাবেই লিখা হয়ে উঠছেনা। রাইটার্স ব্লক। হাজারো শব্দ পেটে গোল খাচ্ছে, কিন্তু শত চেষ্টা করেও সে লেখা মাথা হয়ে, হাত বেয়ে, কিবোর্ডে আনা যাচ্ছে না। কি এক অদ্ভুত অস্বস্তিকর পরিস্থিতি।

সন্ধ্যায় মুহম্মদ আব্দুল হাইয়ের লেখা বিলেতে সাড়ে সাতশ দিন পড়তে বসেছি। ততোক্ষণে আমিও লেখকের সাথে আকাশে ভাসছি, হাওয়াই জাহাজে চেপে বিলেতের পথে। কয়েক পৃষ্ঠা পড়েছি বোধহয়, হঠাত মনে হলো এই বুঝি সব লেখা উপচে পড়লো। পড়িমরি করে ল্যাপটপটা খুঁজে নিয়ে লিখতে বসে গেলাম। বাহ, কি চমৎকার! বহুদিন পর একের পর এক বিচিত্র রঙয়ের শব্দ সাজিয়ে মালা গাঁথছি। সে কি এক আনন্দানুভূতি, ইংরেজি ভাষার লম্বা এক শব্দ, Supercalifragilisticexpialidocious দিয়েও তা ব্যক্ত করার মতো নয়।

::

ফেসবুকে প্রতিদিন নতুন নতুন বই চোখে পড়ছে। দু’চারটা বইয়ের দোকানের ফেসবুক পেজের কল্যানে টামলাইন বইয়ে বইয়ে সয়লাব। তার উপর ফেব্রুয়ারি মাস। বাবা-মায়ের কল্যানে নিজের সংগ্রহে নতুন নতুন বই যোগ করছি। কিন্তু কোনভাবেই তাল মেলানো যাচ্ছেনা। একটা বই কিনতে না কিনতেই দেখি দশটা ততোধিক চমৎকার বই সামনে চলে এসেছে।

জীবনে যতো টাকা পয়সা আমার পকেটে এসেছে, অর্ধেক তার বই কিনেছি। বাকি অর্ধেক গাড়ি ভাড়া দিয়েছি। না গিয়েছি রেস্তোরাঁয়, না কিনেছি গ্যাজেট। শুধু বই আর বই। তারপরও এই যখন অবস্থা, তখন উদাস মনে ভর দুপুরে এক কাপ লেবু চা নিয়ে বইসংক্রান্ত উদারনৈতিক চিন্তায় মত্ত হওয়া ছাড়া উপায়ান্ত নেই।

এক. বিশেষ এক কাজে মাস-তিনেক টানা কক্সবাজার কাটিয়েছি। পুরো সময় জুড়ে আমি নিরিবিলি বসে পড়ার, উল্টেপাল্টে বই দেখার অভাব অনুভব করেছি প্রচন্ডভাবে। সরকারী পাঠাগার আছে একটা। কস্মিনকালে ফটক খোলা দেখিনি। আছে এক রক্ষিত মার্কেট। সব দোকান গাইড বই, চাকরীর বই আর বিসিএসের বইয়ে ভরা। দেশ জুড়ে একই অবস্থা। বাতিঘর, বেঙ্গল বই আর নীলক্ষেত বাদ দিলে দেশে আর তেমন কিছু আছে বলে মনে হয়না। আমি ভাবি, অপাঠ্য বই ছাড়া লোকজনের নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়না?

দুই. ইউরোপের কোন একদেশ, সম্ভবত সুইডেনে লেখক কোন বই লিখলে সরকার প্রথম দুই বা চার হাজার কপি কিনে নিয়ে নিজ দায়িত্বে দেশের সব পাঠাগারে পাঠিয়ে দেন। কতো টাকা পাচার হয়, কতো টাকায় পর্দা-বালিশ কেনা হয়, অল্প টাকা খরচ করে কি সরকার এই কাজটা করতে পারেন না? অবশ্য পাঠাগার খোলা রাখাটাই যেখানে বিলাসিতা সেখানে আবার নিজ গরজে নতুন নতুন বই কেনা… কঠিনই বটে। তবে চিন্তা করতে তো আর দোষ নেই।

তিন. সহজে বই পাওয়ার উপায় কি? ভাবতে ভাবতে এক জিনিস মাথায় আসলো… শ্বশুর বাড়ি থেকে যৌতুক হিসেবে বই নিলে কেমন হয়? যৌতুক যে খারাপ সে আমি জানি, কিন্তু বই নিলে বোধহয় এতো বেশী খারাপ হবেনা। যাদের এতে আপত্তি নেই তারা আমার সাথে যোগাযোগ করুন। সরাসরি না বললেও ইনিয়ে-বিনিয়ে বলতে পারেন। বাকিটা বুঝে নিতে কষ্ট হবেনা। বিষয়টা যৌতুক পর্যন্ত না গড়ালেও অন্তত বিয়ের গিফট হিসেবে বই নির্ধারন করে দেয়া যায়।  

চার. লেখালেখির ব্যাপারটা ছোঁয়াচে। ভালো বই ফুলের মতো। আর পাঠকেরা হলেন মৌমাছির মতো। শুরুতে বলেছিলাম, বিলেতে সাড়ে সাতশ দিন বইটা পড়ছি। পড়তে পড়তে মৌমাছির মতো রস আস্বাদন করছিলাম। মাঝপথে লিখালিখির বাতিক উঠলো। তাই বই রেখে লিখতে বসেছিলাম। এখন মনে হচ্ছে সব রস বোধ হয় বিলিয়ে দেয়া শেষ।