ক্ষমতা ও জনসাধারণ
করিম সাহেবের বিগত অনেক প্রজন্মধরে ধনদৌলত আছে। ধনদৌলত বলতে শুধু ধনদৌলতই, আর কিছু নেই। অবশ্য শুধু তাই যথেষ্ট। আর সে ধনদৌলতকে কেন্দ্র করে সমাজে তার একটা ভালো অবস্থানও তৈরি হয়েছে। যাহোক, সে ধনদৌলত রক্ষার জন্য তার গোষ্ঠিতে কিছু লাঠিয়াল বাহিনী আছে যারা মূলত ভদ্রবেশী ডাকাত। রতনে রতন চেনে। এই লাঠিয়াল বাহিনীর সদস্যরা অবশ্য সমাজের প্রতিষ্ঠিত ডাকাতদের সাথে যোগসাজশে বিভিন্ন কাজে জড়িত থাকে। যেহেতু এই লাঠিয়াল বাহিনী সমাজের ধনদৌলতওয়ালাদেরই তৈরি করা লোক এবং তাদের আশ্রয়পস্রয়ে বেড়ে উঠা, সেহেতু তারা সমাজে ছোটবড় কিছু অন্যায় করলেও পার পেয়ে যান। কারন সমাজে বিচার করছেন তো ওই ধনদৌলতওয়ালারাই। এই সুযোগে ধনদৌলতওয়ালারাও লাঠিয়ালবাহিনী এবং তাদের সাথে সংযুক্ত ডাকাতদের নানান কাজে, নানান ভাবে, নানান সময়ে ব্যবহার করতে পারেন। এভাবে লাঠিয়ালবাহিনী (এবং তাদের সাথে সংযুক্ত সমাজের প্রতিষ্ঠিত ডাকাত) ও ধনদৌলতওয়ালা লোকেদের মধ্যে একটা সিনার্জি তৈরি হয় এবং একে অপরের কাজ, প্রভাব ও সম্পদ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে থাকে।
রাজনীতি ও নির্বাচন
নির্বাচন মানে ধনদৌলতওয়ালাদের ক্ষমতাকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করার পালা। ধনদৌলতওয়ালাদের টাকাও আছে, আবার প্রভাবও আছে। ধনদৌলতওয়ালাশ্রেণির নেতারা বৈঠক করে এমন একজনকে নির্বাচনে দাড় করান যাকে ভালো মতো কাজে লাগানো যাবে। তার জয় নিশ্চিত করার জন্য তারা সম্ভাব্য সবটুকুই করেন। টাকা, হুমুকি-ধামকি দিয়া ভোট কেনা, অন্য প্রার্থীদের প্রচারণার ব্যঘাত ঘটানো, প্রভাব খাটিয়ে কেন্দ্র দখল, এমনকি ঘুষ দিয়ে ফলাফল নিজেদের পক্ষ্যে করে নেয়ার মতো ব্যাপার এভাবে ঘটে থাকে। জয় আর ঠেকায় কে?
অরাজকতা ও বিশৃঙ্খলা
ধনদৌলতওয়ালারা ক্ষমতায় তারা চলে এলো। বলে রাখি, তারা টাকা খরচ করে ক্ষমতায় এসেছে মানুষের সেবার জন্য নয়, বরং কাজ, ক্ষমতা, সম্পদ আর প্রভাবের বিস্তৃতির জন্য। নির্বাচনের প্রচুর টাকা খরচ হয়েছে। তাই প্রথম কাজ হয় সে টাকা তুলে আনা। মেম্বার চেয়ারম্যানদের বেতন তো সর্বোচ্চ হাজার বিশেক, তা দিয়ে কি আর পাছ বছরে বিশ তিরিশ লাখ টাকা লাভ সহ তুলে আনা যায়? সেজন্য তারা ভিজিএফ, ভিজিডি এর কার্ড বিক্রি করে (এটাও আলাদাভাবে বিশাল এক কাহিনী), এলাকার বিচারের সময় ঘুষ খায়, আগে যারা ধনদৌলতওয়ালাদের বিপক্ষ্যে কথা বলেছিলো বা কাজ করেছিলও তাদের ফাসায় ইত্যাদি। এভাবেই অরাজকতা আর বিশৃঙ্খলার শুরু। তাদের দেখে অন্য গোষ্ঠিরাও প্রভাবিত হয় এবং ধনদৌলতওয়ালাদের পথ অনুসরন করে তারাও ক্ষমতায় আসার চেষ্টা করে। যা অরাজকতা আর বিশৃঙ্খলাকে প্রসারিত করে।