আঠারো বছর বয়স

Yusuf's DiaryLeave a Comment on আঠারো বছর বয়স

আঠারো বছর বয়স

১৮ বছর বয়স… এই তো মাত্র সে দিন আব্বু-আম্মুর সাথে ঘুমোতাম। আম্মু-আম্মু বলে কান্না করতাম। ক্লাসে হাফপ্যান্ট পরে যেতাম। মেয়েদের সাথে একবেঞ্চে বসতাম। আরও কতো স্মৃতি…। আর এখন? আব্বু-আম্মুর সাথে ঘুমাই না। আম্মু-আম্মু বলে কান্না করি না। হাফপ্যান্ট পরে ক্লাসে যাই না। ক্লাসে মেয়েদের সাথে একবেঞ্চে বসি না। অর্থাৎ সম্পূর্ণ বিপরীত। বয়স যতো বাড়তে থাকবে, শৈশবের সাথে দূরত্বও ততো বাড়তে থাকবে। এখনকার যেসব স্মৃতিগুলো তখন হয়তো হারিয়ে যাবে। নতুন স্মৃতি যুক্ত হবে ঝুড়িতে। এটাই নিয়ম। এই যে ১৮ বছর পার করে দিলাম, তার মধ্যে কতো কিছু হয়ে গেলো। প্রাপ্তি আর অপ্রাপ্তির তালিকাটা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হতে লাগলো। কতো কিছু করেছি এই ১৮ বছরে। যখন ক্লাস ফোরে ছিলাম, বাবা থেকে দেখে ডাইরি লিখা শুরু করি। সিক্সে গ্রাম থেকে শহরে চলে আসা এবং কলেজিয়েটে ভর্তি হওয়া। ধীরে ধীরে পরিচয় ঘটে আশ্চর্য এক জিনিসের সাথে। ইন্টারনেট। তারপর সেখান থেকে শুরু হয় ব্লগিং। শুরু হয় নিয়মিত পত্রিকা পড়া, বই পড়া। সত্যি কথা বলতে কি, আমার প্রায় ভালো গুণ গুলো আমি বাবা থেকেই পেয়েছি। তারপর চিন্তা চেতনার পরিধিটা বড়ো হতে শুরু করে। কাজ শুরু করি reflectiveTEENS এর। হঠাৎ সুযোগ পেয়ে যাই পত্রিকায় লেখার। গ্রাম থেকে শরে আসার ফলে আমার যে ব্যাপারটা উপলব্ধ হয় সেটা হলো ‘গ্রাম আর শরের মানুষের জীবন মানের পার্থক্য।’ সেখান থেকে শুরু করি reflectiveTEENS Foundation। সায়েন্স ফেয়ার, ডিবেট, এক্সটেম্পর স্পীচ, স্কাউট, ভলান্টিয়ারিং সহ আরও কতো কি। সবকিছুর মাধ্যমে যেটা হয়েছে, সেটা হলো ‘অনেকগুলো মানুষের পরিচয়’। এই যা কিছু করেছি, ঠিক কতো সংখ্যক মানুষের অবদানে আর সাহায্যে এতোদূর আসা তা বলা মুশকিল। ১৮ বছরের এই জীবনে যা কিছু করেছি, তার থেকে ‘ঠিক চারটি’ বিষয় আপনাদের সাথে ভাগাভাগি করা প্রয়োজন বলে আমার মনে হয়েছে।

  • স্বপ্ন দেখা না থামানোঃ

স্বপ্ন খুব আপেক্ষিক একটা ব্যাপার। স্বপ্ন আজ একরকম তো আগামিকাল অন্যরকম। যখন ছোট ছিলাম, স্বপ্ন ছিলো পাইলট হয়ে বিমান চালাবো। আবার কখনো স্বপ্ন ছিলো আর্মি হয়ে যুদ্ধ করবো। যখন আরও বড়ো হই, স্বপ্ন ছিলো বিজ্ঞানী হবো। দুই-তিনটে নোবেল পাবো। এভাবে জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে ঘটে অদ্ভূত স্বপ্নের পরিবর্তন। স্বপ্নের কারণেই আমার এই পর্যন্ত আসা। স্বপ্ন মানুষকে সাহসী করে। ধৈর্যশীল করে। অনেক কিছু জানতে সাহায্য করে। তাই স্বপ্ন দেখা থামানো যাবে না।

  • নিজের উপর বিশ্বাস রাখাঃ

চলার পথে বিভিন্নজন বিভিন্ন কিছু বলবে। সেটাই স্বাভাবিক। তবে সিদ্ধান্ত নিবেন আপনিই। সবার কথাই মনোযোগ দিয়ে শুনেছি। তবে আমার যেটা গ্রহন করা উচিত বলে মনে হয়েছে সেটাই গ্রহণ করেছি, সে কাজটাই করেছি এবং শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করেছি।

  • ধৈর্য ধরাঃ

ব্যাপারটাতে আমি অনেএএএএক কাঁচা। চেষ্টা করেছি কোন ব্যাপারে ধৈর্য ধরার। তবে অধিকাংশেই আমি ব্যর্থ হয়েছি। তবে যে কয়বার ব্যপারটাতে সফল হয়েছি (মানে, ধৈর্য ধরে কিছু একটা করতে পেরেছি) ততবারই আমি খুব ভালো কিছু ফলাফল পেয়েছি। আর সেসব ভালো ফলাফলই আমাকে ধৈর্যের গুরুত্ব বাড়িয়েছে। চেষ্টা করে যাচ্ছি…।

  • সফলতাকে উদযাপন করাঃ

 

ছোট-বড় সব সফলতাকেই আমি উদযাপন করেছি। গভীর থেকে অনুভবের চেষ্টা করেছি। কিভাবে এলো সেটা চুলচেরা বিশ্লেষণ করেছি। কেনো এলো? কি কি কারনে না আসতে পারতো? যদি না আসতো? কিভাবে আরও ভালো করা যেতো? এসব প্রশ্ন আমি নিজেকে করি। এটা আপনাকে একদিকে যেমন অন্যান্য কাজে উৎসাহ যোগাবে, একইভাবে পরবর্তী ভূল থেকে বাঁচতেও সাহায্য করবে।

Please follow and like us:
error0
fb-share-icon0
fb-share-icon20
Yusuf Munna is a Bangladeshi Social Entrepreneur, Writer and Activist. He is currently serving as the founder and CEO at Reflective Teens, an internationally recognized teen based creative platform working to expose, incite and incubate the creativity of teenagers. Yusuf frequently writes for different national English dailies including Dhaka Tribune and The Business Standard.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back To Top