বিদেশে উচ্চশিক্ষা : হাইস্কুল ছাত্রের যা জানা দরকার

সম্প্রতি আমার দিন কাটছে কোরা’তে অদ্ভুত ও দারুণ সব প্রশ্নের উত্তর পড়ে ও মাঝে মাঝে উত্তর দিয়ে। এক পিচ্চির প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে লক্ষ্য করলাম লিখতে লিখতে বেশ বড় হয়ে গেছে। তাছাড়াও প্রশ্নটার উত্তর জানতে চান এমন মানুষের সংখ্যা দিনকেদিন বাড়ছে। তাই ভাবলাম, একই উত্তরটা বরং আমার ব্লগেও দিয়ে দিই। মন্দ হয়না।

প্রশ্নটা ছিলো – চট্টগ্রামের এক সরকারি বিদ্যালয়ে পড়ি। আগামী বছর ইনশাআল্লাহ নবম শ্রেণীতে উঠবো। আমি কি এই বয়সে বিদেশের বিদ্যালয়ে পড়ালেখার জন্য আবেদন করতে পারব?

প্রশ্নকর্তা বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয় বলতে গিয়ে কোনভাবে বিদ্যালয় বলে ফেলেছেন কি? যাহোক, যদি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে হয় তাহলে দুটো জিনিস প্রধানত প্রয়োজন – (এক) স্যাট বা এসিটি এর যেকোনোটা দেয়া এবং (দুই) আইএলটিএস দেয়া।

প্রথমে স্যাট এর কথায় আসি। স্যাট বা SAT হলো ১৬০০ নম্বরের একটা পরীক্ষা যেটাতে ৪টা ভাগ থাকে। রিডিং, রাইটিং, এবং গনিত। গনিতের অবশ্য দুটো ভাগ আছে। ক্যালকুলেটর সহ এবং ক্যালকুলেটর ছাড়া। এই স্যাট পরীক্ষা নেয়া হয় মূলত আপনার একাডেমিক দক্ষতা দেখার জন্য। চাইলে নিজে নিজে প্রস্তুতি নিতে পারেন। আবার কোচিং এ পড়াও সম্ভব। চট্টগ্রামে আমি হাসনাঈন স্যারের কাছে পড়েছিলাম এটার জন্য। উনি জিইসি মোড়ে, সানমারের উত্তর পাশে পড়ান। তবে পরিক্ষার ফি এবং কোচিং ফি – দুটোই একটু খরচ সাপেক্ষ।

তারপর আসে আইএলটিএস। অনেকেরই ভূল ধারণা থাকে আইএলটিএস সম্পর্কে। ভাবে যে শুধু আইএলটিএস দিয়েই বিদেশে যাওয়া সম্ভব। এ ধারণা পুরোপুরি ভূল না, আবার সঠিকও না। বলছি – আইএলটিএস হলো ভাষাগত দক্ষতা বুঝানোর একটা উপায় মাত্র। এটা মূলধারার পড়াশোনার সাথে সরাসরি সম্পরকিত নয়। তাই এটা দেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের আপনার সম্পর্কে পোক ধারণা করা কোন উপায় নেই।

আপনাকে অবশ্যই স্যাট দিতে হবে যদি আপনি বিশ্বের শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো (বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) যেমন- হার্ভার্ড, ইয়েল, প্রিন্সটন, এমআইটি এসবে যেতে চান। সাথে বিশ্ববিদ্যালয় সরাসরি না চাইলেও অন্ততপক্ষ্যে সে দেশের ভিস পাওয়ার জন্য হলেও আইএলটিএস দরকার।

আপনি শুধু আইএলটিএস দিয়েও ইউরোপের বেশকিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে পারেন। তবে সে ক্ষেত্রে তাদের ভাষায় আপনাকে পড়তে হবে। তবে এটা ঠিক যে, সেসব ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় নিজ গরজেই আপনার জন্য সে দেশের ভাষার কোর্স রাখবে। তবুও নতুন নতুন ভাষা শিখে জীবন চালাতে পারলেও একাডেমিক কাজে কতটুকু ফলদায়ক হবে তা অত্যন্ত চিন্তার বিষয়।

তাছাড়াও আরও অত্যন্ত বিবেচ্য বিষয় হলো সহশিক্ষাক্রমিক কার্যক্রম। বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গোটা দুনিয়ার সবচেয়ে মেধাবীরা প্রতিযোগিতা করে। তাই, ওখানে দেখা যাবে স্যাট ১৬০০ তে ১৬০০ পেয়েছেন এবং আইএলটিএস এ ৯ এ ৯ পেয়েছেন এমন অনেকেই আবেদন করবেন। তাহলে আপনি কোথায়? এ যায়গায় স্ট্যান্ডআউট করার জায়গা হলো আপনার সহশিক্ষাক্রমিক কার্যক্রম। এটা এতোই গুরুত্বপূর্ণ যে কখনো কখনো সব থেকে বেশী বিবেচনার বিষয় হয়ে দাঁড়ায় ভর্তি বা স্কলারশিপ দুটোর জন্যই। এছাড়াও আবেদন প্রক্রিয়ায় যেসব জায়গায় এসে বা রচনা লিখতে হবে সেখানে বলার মতো কিছু গল্পও তৈরি হয় সহশিক্ষাক্রমিক কার্যক্রমে অংশ নেয়ার মাধ্যমে।

তার মান এই নয় যে আপনাকে ফিজিক্স বা গনিত অলিম্পিয়াডে গোল্ড পেতে হবে। এমন কিছু দেখাতে হবে যেট অর্থবহ। এমনও অনেক ঘটনা আছে যে, ম্যাথ অলিম্পিয়াডে গোল্ড মেডালিস্টকে প্রত্যাখান করা হয়েছে।

আরেকটা বিষয়, ধরুন হার্ভার্ড লিডারশিপ এক্টিভিটিজকে প্রাধান্য দেয়। অন্যদিকে এমআইটি দেয় গবেষনামূলক কাজকে। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ে মতিগতিও বুঝতে হবে। তার মানে আবার এটা নয় যে হার্ভার্ড শুধু ফিউচার লিডারদেরই নিবে বা এমআইটি শুধু গনিত পদার্থ অলিম্পিয়াডে মেডালিস্টদেরই নিবে। তাদের ভাষায় – নির্বাচন প্রক্রিয়ায় তারা একটা ব্যালেন্সড টিম তৈরি করার চেষ্টা করে।

আসলে কেউই বলতে পারবেনা আপনি সুযোগ পাবেন কি পাবেন না। শুধু আল্লাহ আর নির্বাচক কমিটি জানেন। শুভকামনা থাকলো।

ফেসবুকে একটা গ্রুপ আছে – Bangladeshis Beyond Border: Undergrad Admission Info Portal এখানে আপনার প্রশ্ন করতে পারেন। আবার ফাইল সেকশানে অসংখ্য সহায়ক ফাইল আছে। সেগুলোও চেক করতে পারেন।

কোরা’তে আমার প্রোফাইল লিংক হলো এটা। ঘুরে আসতে পারেন।