টুইন সিস্টার ও প্রেমের অ-আ-ক-খ

গল্প

টুইন সিস্টার ও প্রেমের অ-আ-ক-খ

(১)

মুরাকামির ‘হিয়ার দ্যা উইন্ড সিং’ পড়েছেন? অথবা ‘পিনবল ১৯৭৩’? জিজ্ঞেস করলাম এই কারনেই যে আমিও আজকে একজোড়া জমজ বোনের গল্প বলবো। তবে মুরাকামির গল্পের মতো তারা দেখতে একই রকম না। আমার জীবনের তাদের আবির্ভাব হুট করে না। অথবা আমার সাথে দিগম্বর হয়ে দুপাশে দুজন বিছানায় শুয়েও থাকেনা। তাদের সাথে আমার সম্পর্কটা বিশেষ এবং ভিন্ন। এই সম্পর্কটা অনেকটা শিকলের মতো বলা যায়। তাদের এক বোনকে আমি পছন্দ করি। মানে ভালোবাসি। সে আমাকে ভালোবাসে কিনা সেটা ভিন্ন আলাপ। তার সাথে নানান কথা বলতে গিয়ে, অন্য বোন সম্পর্কে টুকটাক জানতে জানতে একটা সময় পর গিয়ে মনে হলো তাঁর সম্পর্কেও বোধহয় বেশ খানিকটা আমি জেনে ফেলেছি। আপনারা আবার দয়াকরে ভেবে বসবেন না আমার প্রেমের তরী স্থানান্তরিত হয়ে অন্য বোনের ঘাটে গিয়ে ভিড়লো কিনা… প্লিজ এভাবে ভাববেন না। আমি এতোটাও বেহায়া নই। আমার সব কথাই হবে প্রথম বোন, মানে আমি যার প্রেমে পড়েছি, তাকে নিয়ে।

(২)

আমি আগে কখনো মেয়ে ঘটিত ব্যাপারে জড়াইনি। এই প্রথম বিপরীত লিঙ্গের কারও সাথে সেভাবে দীর্ঘ সময়ের আলাপ চলছে। তার পরিবার-পরিজন, চলাফেরা, মেলামেশা, পোশাক আশাক থেকে শুরু করে খাওয়া দাওয়া পর্যন্ত সব বিষয়ে আমার নয় রাজ্যের আগ্রহ। তাকে মনোযোগ নিয়ে দেখতে গিয়ে আমি বেশকিছু বিষয় খুঁজে পাই, আনন্দিত হয় এবং আরও নতুন নতুন বিষয় খুঁজে পেতে দ্বিগুণ উৎসাহে নেমে পড়ি। তার বেশ কয়েকটা ছবি থেকে খুঁজে পেলাম, মেয়েরা যখন চুল খোলা রাখে, এমনভাবে রাখে, যেনো এক কান দেখা যায় আর অন্য কান ঢাকা থাকে। খুব ছোট্ট একটা ব্যাপার। কিন্তু এটার জন্যই তাকে কতো বেশী সুন্দর দেখায়। এ থেকে এও বুঝা যায়, সূক্ষ্ম বিষয়েও মেয়েদের কতো নজর। সে কি আর জানে, ছোট বেলায় মায়ের জন্য সুঁই আনতে আত্নভোলা হয়ে কতবার শুধু সুঁইয়ের কাগজটা নিয়ে ঘরে ফিরেছি? শুধু আমি কেনো, কোনো ছেলেই এতোটা খেয়াল রাখতে পারবেনা।   

কানের দুল নিয়ে আমার বিশেষ কোনো আগ্রহ বা মাথা ব্যাথা নেই। থাকবেই বা কেনো? আমি কি আর কানের দুল পরি? উঁহু। অবশ্য শুধু কানের দুল কেনো, সমগ্র মেইক-আপ বা সাজগোজের ব্যাপার নিয়েও আমার একই হাল। কানের দুলের কথাই যদি বলি, এক ছবিতে দেখলাম বিশাল এক কানের দুল ঝুলিয়ে দিয়েছে কানে। দেখতে মনে হয় যেন তিনটা করে কানের দুল এক করে একেকটা কানে ঝুলানো। এই কাজটা সে করেছে অনায়াসেই। হাজার হোক, তাকে তো সত্যি ভালোবাসি। প্রথম প্রেমে পড়া যাকে বলে। তাঁর কষ্ট বুঝার জন্য ডান হাত দিয়ে একটা কান প্রমাণ পরিমাণ ভর সহ কিছুক্ষন টেনে ধরার পর মনে মনে বেশ মায়া হলো মেয়েটার জন্য। আহ, কি বেদনাটাই না লুকিয়ে আছে তাদের হাঁসির নিচে। মনটাই খারাপ হয়ে গেলো।

(৩)

হুমায়ুন আহমেদ মরে গেছেন। কিন্তু রেখে গেছেন তাই বই আর অগনিত ভক্তকুল। যার কথা বলছি, মানে আমি যাকে ভালোবাসি, সে হুমায়ুন ভক্তকুলের একজন উচ্চ পর্যায়ের সদস্য। হুমায়ুনের প্রায় সব বই তাঁর অন্তঃস্থ করা আছে। কাজে-অকাজে, প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে সে উক্তি ছাড়ে একদম ঠোঁটের ডগা থেকে। এটা মানতেই হবে যে হুমায়ুন তাঁর লেখনির মাধ্যমে বাঙ্গালি নারীদের চিন্তাচেতনাকে অধিকতর বাঙ্গালি করে তুলেছে। কপালে টিপ দেয়া, শাড়ি পড়া, হাতে চুড়ি দেয়ার মতো শ্রী বর্ধনকারী নানান অভ্যাস প্রোথিত করার পেছনে হুমায়ুনের লেখার অবদান অনস্বীকার্য। শুধু তাই নয়, পাঞ্জাবি পড়া ছেলেদের এখন তাদের বেশী পছন্দ। সবকিছু ছাড়িয়ে সবচেয়ে ভালো যে ব্যাপারটা ঘটেছে, তা হলো, ঢংটা গেছে বেড়ে।

মেয়েটা বড়োই অদ্ভুত, আমার কাছে। হঠাত হঠাত গল্প শুনতে চায়। আমি লিখি টুকটাক। কিন্তু তাই বলে যে গল্প ফেরি করে বেড়াই এমনটা নয়। কোনো একদিন সে একটা গল্প শুনতে চাইলো হঠাত করে। আমি লিখে দিলাম একটা, তবে নিজের নয়, অন্যের। খানিকটা এধার-ওধার করে চালিয়ে দেয়া যাকে বলে। কিন্তু সে আমার চেয়ে স্মার্ট। ধরে ফেললো। উপায়ান্ত না দেখে একটা গল্প বানানোর চেষ্টা করলাম সত্যি সত্যি… শুরুটা এরকম –

চারদিকে চাঁদের আলোতে ঝলমল করছে। আমি নদীর পারে বসে আছি। মাঝ নদীতে দুটো নৌকায় কুপির নিভু নিভু আলোতে জেলে মাছ ধরছে। দখিনা মৃদু হাওয়া এসে ভেদ করছে আমার হৃদয়কে। আমি হাঁক দিলাম, “মামা, চাঁদের আলো আছে তো। কুপি নিভাও”

এটা ঠিক কতোটুকু গল্প হয়েছে বলতে পারবোনা। তবে ভাগ্য ছিলো সহায়। নদী, চাঁদের আলো এসব তাঁর পছন্দের বলে সে যাত্রায় বেঁচে গেলাম বিনা বিচারে।  

(৪)

আমি তাকে ভালোবাসি। নিখাদ ভালোবাসা। তার যে কয়টা ছবি আমার সংগ্রহে আছে, তাঁর একটাকে এভাবে বলা যায় – টানা টানা আঁখি, চাঁদের আলোর মতো স্নিগ্ধ তার চেহারা। গোলাপি শাড়ি, লাল ব্লাউজের উপর পড়ে থাকা কৃষ্ণ কালো চুল আর কপালের ছোট্ট টিপটা মায়াকে সহস্রগুণ বারিয়েছে। কতো সময় ছবিটার দিকে তাকিয়ে বিমুগ্ধ চোখে কাটিয়েছি, তা শুধু আমারই জানা। আয়নায় তাকিয়ে থাকা শ্যাম বর্ণের মেয়ে, তোমাকে দেখে বারবার বলতে ইচ্ছে হয়, জগজিৎ বোধহয় তোমার এই ছবির দিকে তাকিয়েই গেয়েছিলো তাঁর গান –

তোমার চুল বাঁধা দেখতে দেখতে।
ভাঙল কাঁচের আয়না।।

তোমার ছলাকলা দেখতে দেখতে।
এ ভাঙল বুকের আয়না।

হয়তো তুমি এই গানের মাঝে আমাকে খুজবে একদিন। হয়তো অজান্তেই তোমার চোখের কোণে জল জমবে, আজ যেমন আমার জমেছে। আমার শিরায়-উপশিরায় বয়ে চলা প্রতিটি রক্তকণিকায় মিশে থাকা ভালোবাসা কীভাবে দেখাই? দেখাই কীভাবে আমার হৃদয়ের প্রতিটি স্পন্দনে তোমার প্রতি জমে থাকা ভালোবাসা? একটা মনোবীক্ষণ যন্ত্রের তাই ভীষণ প্রয়োজন।

Please follow and like us:
error0
fb-share-icon0
fb-share-icon20
Yusuf Munna is a Bangladeshi Social Entrepreneur, Writer and Activist. He is currently serving as the founder and CEO at Reflective Teens, an internationally recognized teen based creative platform working to expose, incite and incubate the creativity of teenagers. Yusuf frequently writes for different national English dailies including Dhaka Tribune and The Business Standard.
Back To Top